Saturday, May 4, 2024
জীবনযাপন

লড়াইয়ের আরেক নাম – দেবস্মিতা

নিজস্ব প্রতিবেদন: পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর নিবাসী দেবস্মিতা জন্ম থেকেই সেরিব্রাল পালসি নামক একটি দুরা রোগ্য রোগে আক্রান্ত। এই রোগটি হলো আসলে immaturity of brain. এই রোগে ব্রেন এর মস্তিষ্কের বিকাশ খুব দেরি করে ঘটে। আর কোনোদিন পুরোপুরি সুস্থ হয়না তাই আর পাঁচ জন বাচ্চার মতো বড়ো হয়ে ওঠেনি। কিন্তু মা-বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমে শেষ পর্যন্ত ৩ বছর বয়সে কথা বলতে শিখলো।

দেবস্মিতা তারপর সাড়ে চার বছর বয়সে প্রথম কবিতা জীবনে প্রবেশ করলো।” রুমির ইচ্ছা”কবিতা বলে প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ছোট্ট দেবস্মিতাকে। তারপর থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন আবৃতি প্রতিযোগিতার অংশ গ্রহণ করা। তার পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও বেতার শিল্পী হিসেবে কাজ করা শুরু হয়।

এছাড়া রবীন্দ্র,নজরুল,সুকান্ত ইত্যাদি কবিদের জন্মদিনে অনুষ্ঠানে করা লেগেই থাকত। তবে ও বরাবর বসে বসে অনুষ্ঠান করে। যাই হোক জীবনে সব প্রতিকূলতা কে জয় করে কবিতা জীবন চলছিল দেবস্মিতার। মাত্র আট বাসার বয়সে রাজ্য কবিতা প্রতিযোগিতাতে প্রথম স্থান অর্জন করে। মাত্র 13 বছর বয়সে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় এর ছাত্রী হওয়ার সুবাদে জীবনে একটা বড়ো পরিবর্তন এলো। গুরুর সূত্র ধরেই জগন্নাথ ও উর্মিমালা বসু ,প্রদীপ ঘোষ প্রমুখ শিল্পীদের কাছে আবৃতির অনুশীলনের সুযোগ পায়।

14 বছর বয়সে একটি টিভি চ্যানেল এ দেবস্মিতার অটোবায়ো গ্রাফি বের করে। তার নাম ছিল “shining star”এই সময় থেকে দুর্গাপুর ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ডাক আস্তে শুরু করে অনুস্টানের জন্য ফেসবুক এর মাধ্যমে।

ইতিমধ্যে কয়েকটি বাচ্চাকে ঘরে আবৃতি শেখানো শুরু করে। ১৩ বছর বয়সে সারা বাংলা আবৃতি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে।

১৩-১৪ বয়স থেকে বিভিন্য নামি দামি কোম্পানির অ্যাড এ ভয়েস দেবার কাজ শুরু করে। এ সব কিছুর মাধ্যমে যে অর্থ দেবস্মিতা উপার্জন করেছে সেগুলি করোনা কালীন সময় বাবার হাতে তুলে দেয় দুস্থ মানুষের সাহায্যের জন্য —

১৭ বছর বয়েসে কলকাতা প্রেস ক্লাব এ দেবস্মিতার প্রথম cd প্রণমি প্রকাশিত হয়

১৯ বছর বয়েসে দ্বিতীয় সিডি শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রকাশিত হয় একই জায়গা থেকে।

কোলকাতাতে প্রথম দেবস্মিতার অনুষ্ঠান শুরু হয় সুজাতা সদনের মাধ্যমে।

সেখান থেকে দেবস্মিতা প্রথম জাতীয় পুরস্কার লাভ করে -প্রথম সিডি রিলিজের পর বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি দেবস্মিতার সাথে সাক্ষাৎ করতে চান রাজভবনে।

সেখানে সিডিটির রি রিলিজ হয়।

প্রথম সিডিটি এত জনপ্রিয়তা পায় যে বাংলাদেশ থেকে অনুষ্ঠানের জন্য ডাক আসে।

বিভিন্ন সোশ্যাল প্লাটফর্ম এ ওর কবিতা সোনার পর ওকে ডাকা হয় অনুষ্ঠান করতে

করোনা কালীন সময়ে ৪৫০ টি লাইভ অনুষ্ঠান করে।

তার মধ্যে বেশ কতগুলি ছিল অন্তর্যাতাত্বিক মানের যেমন – ইতালি ,দুবাই ,বাংলাদেশ ,আমেরিকা ইত্যাদি।

অনলাইন ইন্টারভিউ ও নেওয়া হয় বিভিন্ন দেশ থেকে।

মাত্র 20 বছর বয়েসে দেবস্মিতা প্রচুর সম্মানে সম্মানিত হয় —

যেমন

মনোন সাহিত্য পত্রিকা থেকে

নাদিয়া জেলার Digital media

কলকাতা সমাজবার্তা নিউস ,Safe human rigts এর পক্ষ থেকে

কাজী নজরুল ইসলাম সম্মান ,উষাশ্রি কালচারাল একাডেমী থেকে উষাশ্রি সম্মান ,কলকাতা বই মেলা 2022 শঙ্খ ঘোষ স্মৃতি সম্মান ,জীবনানন্দ দাস স্মৃতি সম্মান , শরৎ স্মৃতি সম্মান ,কবি শ্যামল স্মৃতি সম্মান ,কবি ঈস্বরগুপ্ত স্মৃতি সম্মান ,গীতাঞ্জলি সম্মান ,B R amhedkar সম্মান ,বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মান ,বিশ্ব বাংলা নারী সম্মান , বাংলার গর্ব সম্মান ,বকখালি সাহিত্য উৎসব থেকে কবি শাম সুল হক স্মৃতি সম্মান ,

আসাম কৃষ্টি সম্মান 2022,আসাম বঙ্গ মৈত্রী সম্মান 2022 .

আন্তর্জাতিক সম্মান _

আন্তর্জাতিক বঙ্গ সাহিত্য সম্মান ,ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মান ,নেপাল ভারত দলিত মৈত্রী সম্মান ,

আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মান ইত্যাদি।

বর্তমানে দেবস্মিতা একজন কলেজ ছাত্রী।

IGNU থেকে ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ছে।

তবে স্কুল জীবন একদম সুখকর ছিল – প্রথমে ছিল করুনার পাত্রী কিন্তু কবিতার যাত্রা শুরু হতেই সে হয়ে যায় ঈর্ষার পাত্রী।

মা ও বাবা ছাড়া কারো সহযোগিতা পায়নি।

স্কুলে কোনো কারণ ছাড়াই শাস্তি দেওয়া হতো, শীতকালে মাটিতে বসিয়ে রাখা হতো ,টিফিন ও জল খেতে দেওয়া হতোনা ,বাথরুম এ যেতে দিতোনা ।

তাই স্কুল জীবন দেবস্মিতার মন কে নাড়া দেয় বলে সেসব দিনগুলির কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে চলে।

দেবস্মিতার আবৃত্তি এখন নেশা থেকে পেশায় পরিণত হয়েছে।

নিজের পড়া শুনো ও আবৃত্তি র অনুষ্ঠান ও অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান বজায় রেখে সপ্তাহে একদিন আর্থিনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পরা কিছু বাচ্চা কে পড়াশুনো করায় ও কবিতা শেখায়।

ও নিজেকে সমাজের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরতে চায়। 2023 এ ফেব্রুয়ারী মাসে পেলো আসামের জ্ঞান রত্ন সম্মান ,কোলকাতা বইমেলা থেকে রামমোহন রায় স্মৃতি সম্মান পায়।