Thursday, May 16, 2024
জীবনযাপন

সোশ্যাল মিডিয়া কি মূলধারার গণমাধ্যমের মতোই শক্তিশালী?

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আমাদের ব্যস্ততা। এগিয়ে চলেছে প্রযুক্তি নির্ভর আজকের বিশ্বও। একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে খবর এখন তাৎক্ষণিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় দৌলতে ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই তা পৌঁছে যাচ্ছে সকলের হাতের মুঠোয়। সময়ের খবরটা সময়ে পাওয়াটা আজ বিলাসিতা নয়, একান্ত জরুরী। বলা চলে এটা আমাদের মৌলিক অধিকার। আর সময়ের খবরটা সময়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি। গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি হল- ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট প্রভূতি।

সারা বিশ্বেই এখন সোশ্যাল মিডিয়া শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ তাঁদের নিজেদের মতামত জানাতে পারছে। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা খবরাখবরের ক্ষেত্রে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও এটি বড় প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। তাহলে কি সোশ্যাল মিডিয়া মূলধারার গণমাধ্যমের সমান্তরাল কিংবা বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে?

শুরুর দিকে সোশ্যাল মিডিয়া বিকল্প ধারা হিসেবে শুরু হয়েছিলে, এর কাঠামোও ছিল বিকল্প ধারার। সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তিমত্তা ও প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা লক্ষ্য করার মতোই। সোশ্যাল মিডিয়া ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব তৈরি করেছে।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ার এমন উত্থানে মূল ধারার গণমাধ্যম যেমন সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? উত্তরটা হচ্ছে- এই মাধ্যমের সঙ্গে প্রযুক্তি জড়িত। ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার কারণ হল- এখানে আপনি হয়তো প্ল্যাটফর্ম পাল্টাচ্ছেন, হয়তো ফরম্যাট পাল্টাচ্ছেন। কিন্তু সংবাদ কিন্তু পাল্টাচ্ছে না।

সংবাদ পরিবেশনের যে রীতি, ভালো সাংবাদিকতার চাহিদা তা রয়েই যাচ্ছে। শুধু মাধ্যমটা বদলাচ্ছে। পুরনো গণমাধ্যমগুলোও এই সুযোগ গ্রহণ করছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে, অনলাইনভিত্তিক মাধ্যমে নিজেদেরকে তুলে ধরছে। ব্যবহারকারীরাও ক্রমশ সামাজিক মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছে এবং ওই মাধ্যমেই তাঁরা খবর পড়তে চাইছেন। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার এই উত্থানে মূল ধারার গণমাধ্যমের ক্ষতিগ্রস্ত হবার কোনও কারণ নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিচার্স সেন্টারের (Pew Research Center Survey) করা সমীক্ষা অনুযায়ী, আমেরিকার বেশিভাগ মানুষই সংবাদপত্রের চাইতে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংবাদ জানতে আগ্রহী। সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬৪.৫ শতাংশ মানুষ শুধু হেডলাইন পড়েই ছেড়ে দেন, লিঙ্কে ক্লিক করে খবরটির সম্পর্কে বিস্তারিত পড়েন না।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা ভালো কাজের জন্য ব্যবহার হচ্ছে, তেমনই এটি অপরাধীদের অপরাধ সংগঠনের সূত্রপাতস্থলও বটে। এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে যেমন অপরাধীরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলছে, তেমনি একই মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধ দমনে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধেরও অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। ফলে পাঠকের প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন এসেই যায়।

এদিক থেকে বলতে গেলে বলতে হয় মূল ধারার গণমাধ্যমের যেমন মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করতে পেরেছে সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু অতটা পারেনি। মূল ধারার গণমাধ্যমে পাঠকের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অতটা দায়বদ্ধতা নেই। সেখানে জবাদিহিতার জায়গাটা ততোটা কঠোর এবং কঠিন নয়, যতোটা মূল ধারার গণমাধ্যমের রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে জবাদিহিতার জায়গাটা কম। তাই বলে এটা নয় যে কিছু কিছু মূল ধারার গণমাধ্যমে ভুয়া খবর পরিবেশন করা হয় না। মূল ধারার গণমাধ্যমেও ভুয়া খবর পরিবেশন করা হয় এবং যারা এটা করে তাঁরা ক্রমেই পাঠকপ্রিয়তা বা দর্শকপ্রিয়তা হারাতে থাকে।

তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কোনও খবরকে চোখ কান বুজে বিশ্বাস করে নেওয়া উচিৎ নয়। বর্তমানে মূল ধারার গণমাধ্যমগুলির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁদের নিজস্ব প্লার্টফর্ম রয়েছে। সেখান থেকে ঘটনার সত্যতা যাচাই বাছাই করে নেওয়া উচিৎ। আর একটা জিনিস মনে রাখতে হবে মূল ধারার গণমাধ্যম হোক কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া যে যত বেশি বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সরবরাহ করবে, তাদের ভবিষ্যত ততো উজ্জ্বল। আর ভুয়ো খবর পরিবেশন করলে ক্রমেই পাঠকপ্রিয়তা বা দর্শকপ্রিয়তা হারিয়ে তলিয়ে যেতে হবে কালের অতল গহ্বরে।

বর্তমান সময়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি মানুষের বিশ্বাস, গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে, হিংসা ছড়ানো, গুজব রুখতে একাধিক পলিসি এবং টুলস নিয়ে এসেছে। ভুয়া খবরকে ফেসবুক এবং টুইটার ফ্যাক্ট চেকের মাধ্যমে অটোমেটিক ভাবে চিহ্নিত করে ফেলে। আর উত্তরাত্তর বেড়ে চলা এই জনপ্রিয়তাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিরও উচিৎ নিরাপত্তার বিষয়টি আরও সুনিশ্চিত করা। তবে শুধু যে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিরই দায়িত্ব রয়েছে এমনটা নয়, আপনাকেও একজন সচেতন নাগরিকের পরিচয় দিতে হয়। ভুয়ো, বিদ্ধেষমূলক কোনও কিছু দেখলে কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করতে হয়। তাহলেই সোশ্যাল মিডিয়াও উঠবে সংবাদ প্রাপ্তির গুরুত্বপূর্ণ এক মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমের সমন্বয়ে মানুষের কাছে তথ্যকে আরও সহজে তুলে ধরতে হবে।