Friday, May 17, 2024
সম্পাদকীয়

চূড়ান্ত ব্যর্থতা থেকে সন্দীপ মহেশ্বরীর ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনী

১৯৮০ সালে নয়াদিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন সন্দীপ মহেশ্বরী। তাঁর বাবার নাম কিশোর মহেশ্বরী এবং মা শকুন্তলা রানি মহেশ্বরী। সন্দীপ মহেশ্বরী বর্তমান সময়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মুখ। নিজে এক সময় ভীষণই হতাশার মধ্যে কাটিয়েছেন। সেই তিনিই এখন লাখ লাখ ফলোয়ারকে হতাশা কাটিয়ে এগিয়ে চলার মন্ত্র দেন।

প্রথম দিকে তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালোই ছিল। তাঁর বাবার অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসা ছিল। কিন্তু সেই ব্যবসা ভেঙে পড়ার পরই পরিবারে আর্থিক বিপর্যয় নেমে আসে। সন্দীপ তখন দশম শ্রেণিতে পড়তেন। যত দিন যাচ্ছিল সঞ্চয়ের টাকাও ফুরিয়ে আসছিল। এরপর সন্দীপের বাবা আরও অনেক ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি আর কোনও ব্যবসাই সে ভাবে দাঁড় করাতে পারেননি।

ছোট থেকেই সন্দীপ একটা বিষয় খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছিলেন। জীবনে দাঁড়াতে গেলে টাকা উপার্জন করতেই হবে। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই সেটা শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। তার বাবা তাঁকে একটা স্কুটার কিনে দিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম বন্ধুদের কাছে সেই স্কুটারটা প্রতি ঘণ্টায় ৫০ টাকা ভাড়া খাটাতেন তিনি।

সন্দীপ মেধাবী থাকা সত্বেও পারিবারিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে পড়াশোনাও খুব বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কিরোরিমল কলেজে (Kirori Mal College) পড়াকালীন মাঝ পথেই পড়া থামিয়ে দিতে হয় তাঁকে। পড়াশোনা চলাকালীনই সন্দীপ ১৯ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও তাঁকে মানসিক নিগ্রহের শিকার হতে হয়, তাই বেশিদিন সেখানে তিনি টিকতে পারেননি।

এরপর চাকরির সন্ধানে দু’সপ্তাহের জন্য একটি ফটোগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হন তিনি। এরপর মডেলদের পোর্টফোলিও বানানোর ফটোগ্রাফি স্টুডিও খোলেন তিনি। তবে একেবারেই ভালো চলত না তাঁর স্টুডিও। ২০০২ সালে অন্য একটি ফটোগ্রাফি কোম্পানি খোলেন। কিন্তু সেই কোম্পানি খোলার মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৬ সালে ‘ইমেজেস বাজার’ খোলেন। এই ইমেজেস বাজারই (Images Bazaar) তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়।

এখন ইমেজেস বাজারের সাত হাজার ক্লায়েন্ট ছড়িয়ে আছে বিশ্বের ৪৫টি দেশে। Images Bazaar, যেটি কিনা এশিয়ার সবচেয়ে বড় ভারতীয় Stock Images কোম্পানি। বর্তমানে ImagesBazar.Com এর বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১০ কোটি টাকা। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি দেশের সফলতম উদ্যোগী হন। তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র, ‘ব্যর্থতাকে ভয় পেয়ো না’ এবং ‘নিজের এবং অন্যদের প্রতি সৎ থাকো’।

ইমেজেস বাজারের বাইরেও তাঁর আরও একটা পরিচিতি রয়েছে। তিনি একজন মোটিভেটর, অনুপ্রেরণা জাগানো বক্তাও। সন্দীপ মহেশ্বরী একদম ফ্রীতেই তাঁর নিজের মোটিভেশনাল সেমিনার করেন এবং ভারতের প্রত্যেক যুব সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি চাইলে বিশাল অঙ্কের টাকা প্রতিবছর উপার্জন করতে পারতেন বাকি ওয়ার্ল্ড ক্লাস সব কোম্পানির মালিকদের মতো, আরও কিছু কোম্পানি তৈরি করে, কিন্তু তিনি তা করেননি। তাঁর মতে, আমাদের সকলের ততটুকু অর্থই উপার্জন করা উচিৎ যতটুকু আমাদের নিজেদের, নিজের পরিবারের এবং সমাজের বাকি মানুষদের কল্যাণে কাজে আসতে পারে।