Friday, May 17, 2024
আন্তর্জাতিক

যৌনাঙ্গে যন্ত্র ঢুকিয়ে অত্যাচার, ইলেকট্রিক শক, ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন মিহিরগুল

ওয়াশিংটন: চিনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর পরিবারে জন্ম মিহিরগুল তুরসুনের। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে মিসরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়তে যান তিনি। সেখানেই প্রেম, বিয়ে। তিন সন্তানের জন্মও দেন তুরসুন। ২০১৫ সালে নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চিনে ফিরে আসার সময় সঙ্গে ছিল তার তিন সন্তান। এর পরই বদলে যায় তার জীবন। বাচ্চাদের থেকে আলাদা করে তাঁকে বন্দিশিবিরে নিয়ে যায় চিন সরকার। বিভিন্ন দফায় তিন বার তাঁকে আটক করা হয়।

তার উপর চলে অকথ্য অত্যাচার। এমন অত্যাচারের কথা শুনলে পাষাণ হৃদয়ও হয়তো ঘাবড়ে যাবে। আর সেই অত্যাচারের বর্ণনা সামনে আসতেই গোটা দুনিয়া জুড়ে ইতিমধ্যেই হইচই পড়ে গিয়েছে। উঠেছে নিন্দার ঝড়। সোমবার ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছিলেন ২৯ বছরের মিহিরগুল৷ চিনের উইঘুর প্রদেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উপর চিন সরকারের নারকীয় অত্যাচারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি।

মিহিরগুল বলেন, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি বারবার তাদের কাছে আমাকে মেরে ফেলতে অনুরোধ করেছি। একই সঙ্গে তিনি সামনে এনেছেন তাঁর ওপর চলা ভয়াবহ অত্যাচারের বিবরণ। ২০১৫ সালে দেশে ফেরার পর তাকে তিন মাসের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল বন্দিশিবিরে। ওই সময়ই মারা যায় তার কনিষ্ঠ সন্তান। শুধু তাই নয়, বাকি দুই সন্তানও অসুখে ভুগেছে।

বন্দি থাকাকালীন সেখানে আটক অন্যান্য বন্দিদের মতো তাঁকেও অজানা ওষুধ খাওয়ানো হত। খেতে হত সাদা রংয়ের এক তরল। আর এই সব খাওয়ার পরেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনও জ্ঞান থাকতো না। জ্ঞান ফেরার পর সারা শরীর অসাড় লাগতো। কী হয়েছে তা বুঝতে পারা যেত না। শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্ত বের হত। আর এমন অত্যাচারের কারণে তিন মাসের মধ্যে ৯ জন মহিলা মারা গিয়েছিলেন বলেও জানান মিহিরগুল।

এখানেই অত্যাচারের শেষ নয়। ক্যামেরার সামনেই সমস্ত মহিলাকে মলমূত্র ত্যাগ করতে হত। যখন মনে হত তখনই চিনের কমিউনিস্ট পার্টির স্তুতিতে গান করার জন্য জোর জবরদস্তি করা হত। ২০১৭ সালে দ্বিতীয়বার আটকের সময় অত্যাচারের মাত্রা নাকি আরও বেশি ছিল। চারদিন ধরে চলেছিল জিজ্ঞাসাবাদ। একটুও ঘুমোতে দেওয়া হয়নি। এরপর একদিন আমার মাথা মুড়িয়ে একটি চেয়ারের উপর বসিয়ে দেওয়া হল। পরানো হল একটি হেলমেট। ইলেকট্রিকের শকে তখন আমার গোটা শরীর থর থর করে কাঁপছে। আমার ধমনীগুলো যেন ফেঁটে যাবে এমন অবস্থা। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। শুধু মনে আছে, আমি উইঘুর বলে ওরা আমাকে গালি দিচ্ছিল। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। গোপনাঙ্গে যন্ত্র ঢুকিয়েও পরীক্ষা করা হয়। এত অত্যাচার না করে, আমায় এক্কেবারে মেরে ফেলার জন্য কাকুতি মিনতি করছিলাম।

এর পর সন্তানদের নিয়ে মিসর যাওয়ার অনুমতি পান মিহিরগুল। কায়রোর মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাঁকে আশ্রয় দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই মুহূর্তে তিনি বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়। তবে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চিন সরকারের অত্যাচারের অভিযোগ এই প্রথম নয়। চিনের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আনুমানিক ২০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের। যদিও এ ধরনের বন্দিশিবির থাকার কথা অস্বীকার করেছে চিন সরকার।