Monday, April 29, 2024
জীবনযাপন

পিরিয়ডের সময় এই ১০টি কাজ একদম করবেন না

পিরিয়ড নিয়ে অনেকেরই নানা ছুঁত্‍‌মার্গ থাকলেও এই বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করাটা মেয়েদের জন্য অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত। লুকোছাপা করতে গিয়ে এই নিয়ে অজ্ঞতা দেখা দেয় মেয়েদের মধ্যে। আর সেজন্যই প্রতি মাসে এই শারীরবৃত্তীয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ঘটলেও, সেই সময়টায় না জেনেই বেশকিছু ভুল করে বসেন নারীরা। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।

পিরিয়ডের এই ৩-৫ দিন অনেকটা রক্ত বের হয়ে যায় শরীর থেকে, আর তাই অবশ্যই শরীরের চাই বিশেষ খাবার। তা না হলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন, দেখা দেবে নানান শারীরিক সমস্যা। কেননা একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কী ধরনের খাবার এই সময় খাওয়া হচ্ছে, তার উপর শরীরের ভাল-মন্দ অনেকাংশেই নির্ভর করে।

পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে সুস্থ থাকতে এই নিয়মগুলোও মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া অধিকাংশ মেয়েই পিরিয়ড চলাকালীন যে ভুলগুলি সচারাচর করে থাকে, একবার সেগুলির দিকে নজর দেওয়া যাক:-

১. দীর্ঘক্ষণ একটা প্যাড পরে থাকবেন না: যত বেশি সময় ধরে আপনি একটি প্যাড ব্যবহার করবেন, তত বেশি তাতে ব্যাকটেরিয়া জমা হবে। তাই পিরিয়ডের সময় কোনও ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে প্রতি ৪-৬ ঘন্টা অন্তর অন্তর প্যাডটা বদলে ফেলতে ভুলবেন না। অনেকেই কাজের চাপে বা অবহেলায় দীর্ঘক্ষণ একই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে থাকেন। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এছাড়া সুগন্ধিযুক্ত প্যাড ব্যবহার করাটা ঠিক হবে না। সুগন্ধিযুক্ত প্যাডের মাধ্যমে কেমিক্যাল ইনফেকশন ছড়াতে পারে যা ব্যাকটিরিয়া তৈরি করতে পারে। কারণ সুগন্ধিযুক্ত প্যাডে এমন কিছু সিন্থেটিক কেমিক্যাল যুক্ত থাকতে পারে, যা হয়ে উঠতে পারে ক্যান্সারপ্রবণ।

২. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব: ব্যথা, ক্র্যাম্পিং, হরমোন জনিত ভারসাম্যহীনতা ও অস্বস্তির কারণে পিরিয়ড চলাকালীন ইনসমনিয়া (অনিদ্রা রোগ) দেখা দেয় মেয়েদের মধ্যে। পিরিয়ড চলাকালীন পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব শরীরকে আরও অসুস্থ করে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম হলে পিরিয়ড অনেক সহজ ও কম কষ্টকর হয়।

৩. মাত্রতিরিক্ত শরীরচর্চা করবেন না: অধিকাংশ মেয়েই পিরিয়ড শুরু হলে শরীরচর্চা বন্ধ করে দেন। এই সময়টায় শরীরচর্চা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বলেই বেশিরভাগ মানুষের ধারণা। তবে এই সময় অল্প বিস্তর শরীরচর্চা চলতে পারে। কিন্তু যদি পেটে এবং পিঠে ব্যথা থাকে, তাহলে তো একেবারেই শরীরচর্চা করা যাবে না। এই নিয়মটা না মানলে কিন্তু যন্ত্রণা বাড়বে। মাসিক চলাকালীন সপ্তাহে পাঁচ দিন দিনে অন্তত ৩০ মিনিট করে ওয়ার্ক আউট করা উচিত। শরীরচর্চা করলে চাপমুক্ত হওয়া ও ঘামের মাধ্যমে টক্সিন বেরিয়ে যাওয়া ছাড়াও ব্যথা ও খিঁচ ধরার মতো সমস্যাগুলো কেটে যায়। তার ফলে ঘুমটাও ভালো হয়।

৪. দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকবেন না: পিরিয়ডের সময় খালি পেটে একেবারেই থাকবেন না। এই সময় যেহেতু মাত্রতিরিক্ত পরিমাণে এনার্জি লস হয় এবং এই ৩-৫ দিন অনেকটা রক্ত বের হয়ে যায় শরীর থেকে তাই এই ঘাটতি পূরণের জন্য় ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করাটা একান্ত প্রয়োজন।

৫. ফাস্ট ফুড বা ভাজাভুজি খাবেন না: এমনিতেই জাঙ্ক ফুড খাওয়া শরীরের পক্ষে মোটেও ভালো নয়। আর এই সময় এমন খাবার খেলে তো আরও বিপদ। পিরিয়ডের সময় জাঙ্ক ফুড জাতীয় খাবার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই এগুলি থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

৬. কাপড়ের ব্যবহার করবেন না: এখনও গ্রাম-গঞ্জ, শহরতলি এমনকী শহরেও অনেক মেয়েরা পিরিয়ডের সময় কাপড়ের ব্যবহার করেন। এটি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তাই সবসময় কাপড়ের পরিবর্তে হাইজেনিক প্যাড ব্যবহার করুন।

৭. চা-কফি, সিগারেট খাবেন না: পিরিয়ড চলাকালীন ক্লান্তি, ঘুমের অভাব, মাথা ব্যথার মতো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাগুলি থাকায়, মাঝে মধ্যেই কফি খেতে মন চায়। তবে এই সময়টায় মেয়েদের কফি-চা না খাওয়াই ভালো। কারণটি হচ্ছে ক্যাফেন শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এই সময়টায় উল্টে শরীরের ক্ষতি করে দিতে পারে। বাড়িয়ে দিতে পারে মাথাব্যাথা। পিরিয়ডের সময় চা-কফি যত বাদ দেবেন, ততই টেনশন, নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগের মতো সমস্যাগুলি কম হবে।

৮. কোল্ড ড্রিঙ্ক খাবেন না: এই নিয়মটা না মানলেও কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই পিরিয়ডের সময় বরফ জল এবং কোল্ড ড্রিঙ্ক একেবারেই খাবেন না। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই সময় এই ধরনের পানীয় খেলে ইউটেরাইন ওয়ালে রক্ত থেকে যায়। এমনটা হতে থাকলে ৫-১০ বছর পরে গিয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়।

৯. পেন রিলিফ এড়িয়ে চলুন: মাসিকের সময় স্বাভাবিক নিয়মে হওয়া ব্যথা নিরাময়ের জন্য মেয়েরা অনেকক্ষেত্রেই নানা ওষুধের সাহায্য নেন। পেন রিলিফের এই ওষুধ বা ইঞ্জেকশনে যে স্টেরয়েড থাকে, তা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। বেশ কয়েকটি ওষুধ সমস্যা কমানোর পরিবর্তে আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে। আর স্টেরয়েড বিহীন অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগ আপনার শরীরে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। প্রতিনিয়ত এ ধরনের ওষুধ খেলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে কিডনি এবং লিভারের উপরও।

১০. সুরক্ষিত সেক্স: পিরিয়ডের সময় যোনিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া এই সময় সুরক্ষিত শারীরিক সম্পর্ক না করলে গর্ভবতী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কিন্তু বেড়ে যায়। কাজেই নিজের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই সময়টায় সঙ্গমে লিপ্ত হলে পর্যাপ্ত সুরক্ষার দিকটা মনে না থাকলে, তা হতে পারে মারাত্মক।