Sunday, May 19, 2024
সম্পাদকীয়

মানবাধিকার বাঁচানোর আন্দোলন গণ আন্দোলনের রূপ পেল কোথায়?

————————————————————————–

বজ্রবাহু সান্যাল

=========

ধরুন আপনি মালদা বা দক্ষিণ ২৪ পরগণা বা নদীয়ার কোন নেকড়ে অধ্যুষিত অঞ্চলে থাকেন। ঘরের মহিলাদের সম্মানরক্ষা ও নিজের জীবন বাঁচানোর চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। ভিটেমাটি কী করে বাঁচাবেন, ভেবে ভেবে প্রাণ ওষ্ঠাগত।

এমতাবস্থায় আপনি দেখলেন এমন একটি রাজনৈতিক দল উপস্থিত হয়েছে, যারা নেকড়েদের হাত থেকে মানুষের জীবন ও জীবিকার অধিকার বাঁচানোর কথা বলে। সেই দল ভোটের আগে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে বিরাট জনসমাবেশের আয়োজন করেছে।

আপনি এবং আপনার মত আরও অনেকে মহা উৎসাহে লরি, বাস বোঝাই করে সেই সভায় উপস্থিত হলেন। একজন নেতা, ধরা যাক, তার নাম সমীর ভট্টাচার্য, তখন মঞ্চে উদাত্ত কণ্ঠে ভাষণ দিতে দিতে বললেন, “এটা অমুক নেকড়ের মাটি, এটা তমুক নেকড়ের মাটি।” আপনার মুখ দিয়ে কি তখন সেই নেতার উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ বেরিয়ে আসবে না??

ধরুন আপনি এক সুপ্রাচীন রাজপরিবারের বংশধর। আপনার পূর্বপুরুষকে এক নেকড়ে সামনাসামনি যুদ্ধে সুবিধা করতে না পেরে ছলাকলায় হারিয়েছিল। আপনাদের সেই রাজপ্রাসাদের জমিতে নেকড়ের দল এখন তীর্থক্ষেত্র তৈরি করেছে। আপনাকে এখনও রাজার সম্মান দেওয়া প্রজাস্বরূপ চাষীদের জমিতে সেই নেকড়ের বর্তমান পুরুষের নজর পড়েছে।

আপনিও মনস্থির করলেন, নেকড়ে মেরে মানবাধিকার বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া দলটিকে আপনি সমর্থন জানাবেন। চাষীরাও আপনার পিছনে এককাট্টা। এমন সময় একদিন আপনি খবরে দেখলেন যে এই মানবাধিকারী দলটির রাজ্য সভাপতি, ফিলিপ মোষ বলেছেন, “এই বাংলা যতটা আমার, ততটাই ওই নেকড়ের।” আপনি পারবেন নিজের পিতৃপুরুষের অপমান করে ওই দলকে আর সমর্থন করতে বা প্রজাদের বলতে??

এই রাজ্যে মানবাধিকার বাঁচানোর লড়াইকে গণ উন্মাদনায় পরিণত করা যায়নি। তাই উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষ নেকড়েদের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হয়নি। আর ইতিহাস সাক্ষী আছে, গণ উন্মাদনা ছাড়া এই বাংলায় গদি উল্টায় না।

(লেখক- বজ্রবাহু সান্যাল। মতামত লেখকের নিজস্ব)