Monday, May 6, 2024
সম্পাদকীয়

তামিলনাডুর বীরযোদ্ধা রানী ভেলু নাচিয়ার

সংগ্রাম দত্ত: শিবগঙ্গা রাজ্যের রাণী ছিলেন ভেলু নাচিয়ার আনুমানিক ১৭৮০ সাল থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত। তিনি প্রথম রানী, যিনি ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি তামিলদের কাছে বীরামঙ্গাই (একজন সাহসী নারী) হিসাবে পরিচিত। ভেলু নাচিয়ার রামনাথ পুরমের রাজকুমারী ছিলেন এবং রামনাদ রাজ্যের রাজা চেল্লামুথু বিজয়রঘুনাথ সেতুপতি এবং রানী সাকান্ধিমুথালের একমাত্র সন্তান ছিলেন। ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ শক্তির বিরুদ্ধে রাণী হিসাবে তিনিই প্রথম লড়াই করে ছিলেন।

রাণী ভেলু নাচিয়ার জন্ম হয়েছিল ৩ রা জানুয়ারি ১৭৩০ সালে। তবে ভারতের ইতিহাসে রাণী লক্ষ্মীবাঈকে প্রথম রাণী হিসেবে ধরা হয়, যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। ভেলু নাচিয়ার যুদ্ধে ব্যবহৃত সবরকম অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। তিনি সামরিক যুদ্ধ কৌশল, যেমন ভালারি, সিলাম্বাম (লাঠি ব্যবহার করে যুদ্ধ), ঘোড়াচালনা এবং তীরচালনা ইত্যাদিতে শিক্ষালাভ করেছিলেন। তিনি বহু ভাষা জানতেন এবং ফরাসি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তিনি শিবগঙ্গাইয়ের রাজাকে বিবাহ করেছিলেন এবং তাদের একটি কন্যা সন্তান ছিল। যখন তাঁর স্বামী মুথুভাদুগনথাপেরিয়া উদয়াথেভরকে ব্রিটিশ সৈন্য এবং আর্কটের নবাবের পুত্র হত্যা করে, তখন তাঁকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়। তিনি তাঁর কন্যার সাথে পালিয়ে যান এবং পলয়কারর কোপালা নায়াক্করের সুরক্ষায়, ভিরুপাচির কাছে দিন্দিগুল এ আট বছর বসবাস করেন। সেই সময় তিনি একটি সেনাদল গঠন করেছিলেন এবং ব্রিটিশদের উপর আক্রমণ করার লক্ষ্যে গোপাল নায়াকার এবং হায়দার আলীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হন। ১৭৮০ সালে তিনি সফলভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। যখন ভেলু নাচিয়ার ব্রিটিশদের গোলাবারুদ সংরক্ষণ করার জায়গাটি খুঁজে পান, তখন তিনি একটি আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেন: তাঁর একজন বিশ্বস্ত অনুগামী কুইলি নিজেকে তেলের মধ্যে ডুবিয়ে, গায়ে আগুন ধরিয়ে, মজুতখানায় ঢুকে যান। ভেলু নাচিয়ার আঁর পালিত কন্যা উদাইয়ালের সম্মানে “উদাইয়াল” নামক একটি মহিলা সেনাবাহিনী গঠন করেন। উদাইয়াল ব্রিটিশ অস্ত্রাগার বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন। নাচিয়ার সেই সব কয়েকজন শাসকদের মধ্যে একজন ছিলেন, যিনি তাঁর রাজত্ব পুনরুদ্ধার করেন এবং দশ বছর ধরে শাসন করেন।

১৭৯০ সালে তাঁর কন্যা ভেল্লাচ্চি উত্তরাধিকারসূত্রে সিংহাসনের অধিকারী হন। ভারতে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য, প্রথম লড়াই করেছিলেন রাণী ভেলু নাচিয়ার। ১৭৮০ সালে তিনি দেশ পরিচালনা করার জন্য মারুদু ভাইদের হাতে ক্ষমতা দেন। এর কয়েক বছর পর ২৫শে ডিসেম্বর ১৭৯৬ সালে ভেলু নাচিয়ার মারা যান।

৩১শে ডিসেম্বর ২০০৮ সালে তাঁর নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। চেন্নাইয়ের ওভিএম নৃত্য একাডেমী, শিবগঙ্গা রাণী ভেলু নাচিয়ার এর উপর, একটি জমকালো নৃত্যনাট্য উপস্থাপন করে। একজন তামিল-আমেরিকান হিপ-হপ শিল্পী প্রফেসার এ.এল. আই, ২০১৬ সালে ভেলু নাচিয়ারকে নিবেদন করে তামিলম্যাটিক অ্যালবামে “আমাদের রাণী” শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করেছিলেন। ২০১১ সালের ২১ আগস্ট চেন্নাইয়ের নারদ গান সভায় রানী ভেলু নাচিয়ারের জীবনের ইতিহাসের বর্ণনা করে একটি নৃত্যনাট্য অনুষ্ঠিত হয়। এই নৃত্যনাট্যটি পরিচালনা করেছিলেন শ্রীরাম শর্মা, যিনি প্রায় এক দশক ধরে রাণীর জীবনের ইতিহাসে নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।