Friday, April 26, 2024
সম্পাদকীয়

খাদ্যরসিক নেতাজি

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম নায়ক ছিলেন নেতাজী। তাকে নিয়ে বাঙালির মনে আজও রয়ে গেছে বহু কৌতূহল। কল্পজগতের থেকেও অবিশ্বাস্য অবাধ যাঁর বিচরণ। সেই মানুষটার খাদ্যাভাস কেমন ছিল ? কি খেতে ভালোবাসতেন নেতাজী ? এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই হয়ত জেগেছে।

সাধারণ বাঙালির মত ভাত, ডাল, তরকারি ছিল তাঁর খুব পছন্দের। ডালের মধ্যে সোনা মুগ ডাল ছিল তাঁর খুব প্রিয়। পুঁইশাকের চচ্চড়ি, মৌরলা মাছ, বেগুন পোড়া, কাটা দিয়ে ডাল ছিল সুভাষচন্দ্র বসুর প্রিয় পদ। ভাতেভাত ও খিচুড়িও বিশেষ পছন্দ ছিল নেতাজীর। প্রথমে সকল আমিষ খাবার খেলেও পরে মাছ ছাড়া অন্য কোন আমিষ খাবার খেতেন না তিনি। খাবার শেষ পাতে থাকত টক দই আর বিভিন্ন মিষ্টি। মিষ্টির মধ্যে রসগোল্লা, সন্দেশ, চমচম ছিল তাঁর পছন্দের। এছাড়াও ভালোবাসতেন নারকেলের তৈরী মিষ্টি এবং গ্রামবাংলার তৈরী মিষ্টি। চিনির পুলি, মনোহরা, নারকেল নারু, রসকরা, ছাতুর বার্ফি, মুরির নারু, মোয়া, তিলের নারু এবং তিলের চাকতি ইত্যাদি বিশেষ প্রিয় ছিল নেতাজীর।

ছাত্রাবস্থায় এবং তারপরেও রাজনৈতিক জীবনের প্রথমদিকে নিয়মিত ছিলেন কফি হাউসের ৪ নম্বর টেবিল এ সেখানে আবার ওনার প্রিয় ছিল ‘চিকেন কাটলেট’।

তাঁর সব থেকে প্রিয় পানীয় ছিল চা। জানা যায় তিনি দিনে ২০-২৫ বার চা খেতেন। তবে সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন কফি’র প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছিলেন যথেষ্ট। এছাড়াও লেবুর শরবত খেতে ভালোবাসতেন তিনি। গরম জলে বিটনুন দিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে তিনি প্রায়ই খেতেন। ফলের মধ্যে আঙুর, কলা খুব পছন্দ ছিল নেতাজীর। প্রচন্ড সুপারি খেতেন নেতাজি। এমনকি ব্যাডমিন্টন খেলার সময়ও তিনি সুপুরি খেতেন। পরে অবশ্য সুপারি সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে হরিতকি খেতেন।

স্বাধীনতার সংগ্রামের কাজের জন্যে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন। এই কাজ করতে গিয়ে একবার তাঁর শরীর খুব ভেঙে যায়। ১৯৩৭ সালে তিনি স্বাস্থ্য পুনরোদ্ধার করতে যান হিমাচল প্রদেশের ডালহৌসিতে। শোনা যায় সেখানকার একটি জলাশয় বা বাউলির জল খেয়ে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেই জায়গা আজও ‘সুভাষ বাউলি’ নামে পরিচিত।

‘লক্ষীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স’ দোকানের তেলেভাজা খুব প্রিয় ছিল নেতাজীর। দোকানের আশেপাশেই নানা ডেরায় গোপন মিটিং বসত স্বদেশীদের। তেমনি কোনো এক মিটিঙে এসেছিলেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু। সেদিন তেলেভাজা নিয়ে আসা হল ওই দোকান থেকে। তেলেভাজা খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন নেতাজী। ১৯৪২ সাল থেকে প্রতি বছর নেতাজির জন্মদিনে, ২৩ জানুয়ারি, বিনামূল্যে তেলেভাজা বিতরণ শুরু করেন দোকানের মালিক খেঁদু সাউ। সেই ট্র্যাডিশন এখনো চলছে। নেতাজীর জন্মদিনে সকাল সাতটা থেকে বেলা তিনটে অবধি চলে এই বিনামূল্যে তেলেভাজা বিতরণ।

‘পারামাউন্টে’র ডাবের শরবত খুব পছন্দ ছিল নেতাজীর। কফিহাউসেও প্রায়ই যেতেন নেতাজী। প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় সূর্যসেন স্ট্রিটের ফেভারিট কেবিনে যেতেন নেতাজী। বসতেন ৪ নম্বর টেবিলে। আজও ৪ নম্বর টেবিল শ্রদ্ধার বিষয় এখানেও। ওখানে বসেই তিনি শুনতেন নজরুলের গান। ওখানে রান্নাঘরের পাশের ঘরেই বসত বিপ্লবীদের গোপন বৈঠক। স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলেও যেতেন নেতাজী। এখানে নিজের হাতে শতরঞ্চি পেতে বন্ধুদের নিয়ে এক আনায় দুবেলা ভরপেট মাছ ভাত খেয়েছেন নেতাজী বহুবার। এছাড়াও ভীমচন্দ্র নাগের সন্দেশ খুব প্রিয় ছিল।

নেতাজির প্রিয় খাদ্যপ্রতিষ্টানগুলোর মধ্যে বেশ কিছু এখনো বর্তমান।।

 

♦️ লক্ষীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স :

 

হাতিবাগানের এই তেলেভাজার দোকানটা ২৩ শে জানুয়ারীর দিন সবাইকে বিনামূল্যে তেলেভাজা বিতরণ করে ওনার স্মৃতিতে। শোনা যায় নেতাজি ওনার জন্মদিন পালন করেছিলেন এই দোকানে।

 

♦️ প্যারামাউন্ট :

বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রিটের এই শরবতের দোকানটি ছিলো ওনার খুব প্রিয়।

 

♦️ ইন্ডিয়ান কফি হাউস :

 

আড্ডাজগতের মক্কা হিসেবে প্রখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানের ৪ নম্বর টেবিল এখনো বিখ্যাত নেতাজির স্মৃতিতে।

 

♦️ ফেভারিট কেবিন :

 

সূর্য সেন স্ট্রিট অঞ্চলে আজও ৪ নম্বর টেবিল শ্রদ্ধার বিষয় এখানেও।

 

♦️ স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল :

 

এখানে নিজের হাতে শতরঞ্চি পেতে বন্ধুদের নিয়ে এক আনায় দুবেলা ভরপেট মাছ ভাত খেতেন নেতাজি বহু বছর। কলেজ স্ট্রিটের কাছেই ৮/২ ভবানী দত্ত লেন-এ এখনো স্বমহিমায় চলছে স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল।

 

♦️ La Tour d’Argent :

 

প্যারিসের ১৫ 15 quai de la Tournelle এ অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটি আজ বিখ্যাত। ১৯৪১ সালে নেতাজির সাথে তৎকালীন ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষাপট হিসেবে। এখানেই ওনারা লাঞ্চ মিটিং-এ দেখা করেছিলেন।

 

© এক যে ছিলো নেতা