Saturday, April 20, 2024
সম্পাদকীয়

আধ্যাত্মিকতা প্রসঙ্গে নেতাজি

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: নিয়মিত ব্যায়াম করিলে শরীরের যেরূপ উন্নতি হয় — তেমনি নিয়মিত সাধনা করিলেও সদ্বৃত্তির অনুশীলন ও রিপুর ধংস হইয়া থাকে। সাধনার উদ্দেশ্য দুইটি ?

(১) রিপুর ধংস, প্রধানতঃ কাম, ভয় ও স্বার্থপরতা জয় করা, (২) ভালবাসা, ভক্তি, ত্যাগ,বুদ্ধি প্রভৃতি গুণের বিকাশ সাধনা করা। কামজয়ের প্রধান উপায় সকল স্ত্রীলােকের মধ্যে মাতৃরপ দেখা ও মাতৃভাব আরােপ করা এবং শ্রীমতিতে (যেমন দুর্গা, কালী) ভগবানের চিন্তা করা। শ্রীমতিতে ভগবানকে দেখিতে শিখে সে অবস্থায় পৌঁছিলে মানুষ নিষ্কাম হইয়া যায়। এই জন্য মহাশক্তিকে রুপ দিতে গিয়া আমাদের পূর্বপুরুষেরা স্ত্রী-মূর্তি কল্পনা করিয়াছেন । ব্যবহারিক জীবনে সকল স্ত্রীলােককে ‘মা’ বলিয়া ভাবিতে ভাবিতে মন ক্ৰমশঃ পবিত্র ও শুদ্ধ হইয়া যায়।

ভক্তি প্রেমের দ্বারা মানুষ নিঃস্বার্থ হইয়া পড়ে। মানবের মনে যখনই কোন ব্যক্তি বা আদর্শের প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি বাড়ে তখন ঠিক সেই অনুপাতে স্বার্থপরতাও কমিয়া যায়। মানুষ চেষ্টার দ্বারা ভক্তি ও ভালবাসা বাড়াইতে পারে এবং তার ফলে স্বার্থপরতাও কমাইতে পারে। ভাল বাসিতে বাসিতে মনটা ক্রমশঃ সকল সঙ্কীর্ণতা ছারাইয়া বিশ্বর মধ্যে লীন হইতে পারে। তাই ‘ভালবাসা, ভক্তি বা শ্ৰদ্ধার যে-কোন বস্তু-বিষয়ের ধ্যান বা চিন্তা করার দরকার। মানষ যাহা চিন্তা করে ঠিক সেইরূপ হইয়া পড়ে। নিজেকে ‘দুর্বল পাপী’ যে ভাবে, সে ক্ৰমশঃ দুর্বল হইয়া পড়ে, যে নিজেকে শক্তিমান ও পবিত্র বলিয়া নিত্য চিন্তা করে সে শক্তিমান ও পবিত্র হইয়া উঠে। যাদৃশী ভাবনা যস্য সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী।”

ভয় জয় করার উপায় শক্তি সাধনা। দুর্গা, কালী প্রভৃতি মূর্তি শক্তির রূপবিশেষ। শক্তির যে কোন রুপ মনে মনে কল্পনা করিয়া তাঁহার নিকট শক্তি প্রার্থনা করিলে এবং তাহার চরণে মনের দুর্বলতা ও মলিনতা বলিস্বরূপ প্রদান করিলে মানুষ শক্তিলাভ করিতে পারে। আমাদের মধ্যে অনন্ত শক্তি নিহিত আছে, সেই শক্তির বােধন করিতে হইবে। পূজার উদ্দেশ্য মনের মধ্যে শক্তির বােধন করা। প্রত্যহ শক্তিরূপ ধ্যান করিয়া শক্তিকে প্রার্থনা করবে এবং পঞ্চেন্দ্রিয় ও সকল রিপুকে তাহার চরণে নিবেদন করিবে। পঞ্চপ্রদীপ অর্থ পঞ্চেন্দ্রিয়। এই পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মায়ের পূজা হইয়া থাকে। আমাদের চক্ষু আছে তাই আমরা ধূপ গুগগুল প্রভৃতি সুগন্ধি জিনিষ দিয়া পূজা করি ইত্যাদি।

 

বলির অর্থ- রিপু বলি—কারণ ছাগই কামের রূপবিশেষ।

 

সাধনার উদ্দেশ্য একদিকে রিপু ধ্বংস করা অপরদিকে সদ্বৃত্তির অনুশীলন করা।রিপুর ধংস হইলেই সঙ্গে সঙ্গে দিব্যভাবের দ্বারা হৃদয় পূর্ণ হইয়া উঠিবে। আর দিব্যভাব হদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিলেই সকল দুর্বলতা পলায়ন করিবে।।

 

প্রত্যহ (সম্ভব হইলে) দুইবেলা এইরুপ ধ্যান করিবে। কিছুদিন ধ্যান করার সঙ্গে সঙ্গে শক্তি পাইবে, শান্তিও হদয়ের মধ্যে অনুভব করিবে।।

 

আপাততঃ স্বামী বিবেকানন্দের এই বইগুলি পড়িতে পার। তাঁহার বই-এর মধ্যে “পত্রাবলী” ও বক্তৃতাগুলি বিশেষ শিক্ষাপ্রদ। ভারতে বিবেকানন্দ বই-এর মধ্যে এসব বােধ হয় পাইবে। আলাদা বইও বােধ হয় পাওয়া যায়। পত্রাবলী’ ও বক্তৃতাগুলি না পড়িলে অন্যান্য বই পড়িতে যাওয়া ঠিক নয়। Philosophy of Religion’, ‘Jnanyoga’ বা ঐ জাতীয় বইতে আগে হস্তক্ষেপ করিও না। তারপর সঙ্গে সঙ্গে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামত’ পড়িতে পার। রবিবাবুর অনেক কবিতার মধ্যে খুব inspiration পাওয়া যায়।

 

—- শ্রী সুভাষচন্দ্র বসু

 

(শ্রীহরিচরণ বাগচীকে লিখিত)

মান্দালয় জেল (১৯২৬ ? )

@ এক যে ছিল নেতা