Wednesday, April 23, 2025
Latestরাজ্য​

প্রতিবাদের নামে হামলা, লুটপাট, ধর্ষণের হুমকি; শুনুন ভুক্তভোগীদের বক্তব্য

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে হামলা, লুটপাট। অভিযোগ, বেছে বেছে হিন্দুদের উপর হামলা করা হয়েছে। হিন্দুদের বাড়িঘর, দোকান এবং মন্দিরে হামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। জানা গেছে, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরপরই এই হামলা শুরু হয়।

পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, হাজার হাজার হিন্দু মুর্শিদাবাদ থেকে মালদায় আশ্রয় নেয়। তারা বাড়িঘর ছেড়ে এককাপড়ে নৌকায় করে নিকটবর্তী মালদায় চলে আসতে বাধ্য হয়। এটা ২০২১ এবং ২০২৩ সালের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। 

এখানে ১২টি ভিডিও রয়েছে যেখানে হিন্দুরা মুর্শিদাবাদে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন: 

মঞ্জু ভগত বলেন, “দুষ্কৃতীরা সামনের গেট দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। ব্যর্থ হয়ে তারা পিছনের গেট দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বাইক ভাঙচুর করেছে, আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং চেয়ার, টিভি থেকে শুরু করে দামি গৃহস্থালীর জিনিসপত্র সবকিছু লুট করেছে।”


মঞ্জু ভগত আরও বলেন, “আমার পুরো পরিবার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে লুকিয়ে ছিলাম। আমরা ঈশ্বরের নাম জপ করছিলাম এবং প্রার্থনা করছিলাম দুষ্কৃতীরা যেন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। সেই সময় আমার মেয়ের কিছু হলে আমি কী করতাম? আমার স্বামী দোকানে আটকা পড়েছিলেন।”

আরেক হিন্দু দোকানদার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমি এখানে যে চা, বিস্কুট এবং সিগারেট বিক্রি করতাম, তার সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। পুলিশ আসেনি।”


নারায়ণ সাহা নামে আরেকজন বলেন, “হামলার সময় আমার দোকান বন্ধ ছিল। আমার দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আমি কী বলব বা করব বুঝতে পারছি না। এখানে কোনও নিরাপত্তা নেই।”

সুজিত প্রসাদ নামে আরেকজন বলেন, “দুষ্কৃতীরা সতর্ক করেছে- এটি একটি ট্রেলার। সিনেমা এখনও বাকি।”


কাঁদতে কাঁদতে আরেক মিষ্টির দোকানদার বলেন, “এখানে আমার মিষ্টির দোকান ছিল। ‘শুভ স্মৃতি হোটেল’-এর দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।”

দোকান মালিকের স্ত্রী বলেন, “ওরা আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। দোকানের ভেতরে রাখা নগদ টাকা সহ… কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন আমরা কীভাবে খাব?”

মনোজ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, “ঘরবাড়ি এবং দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। সবকিছু লুট করেছে। আপনি চারপাশে তাকাতে পারেন এবং নিজের চোখে দেখতে পারেন। এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য – হিন্দুদের উপর আক্রমণ এবং লুটপাট করা। শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা এখানে একটি স্থায়ী সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) ক্যাম্প চাই। যখন জনতা এখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল, তখন ৪ ঘন্টা ধরে কোনও পুলিশ ছিল না।”

মনোজ ঘোষের অভিযোগ, “পুলিশ স্টেশন এখান থেকে হাতের নাগালেই (২০০ মিটারেরও কম দূরত্বে)। কিন্তু পুলিশ আমাদের উদ্ধারে আসেনি।”


আরেকজন এএনআইকে বলেন, “দুষ্কৃতীরা বাইক ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, আমাদের জিনিসপত্র লুট করেছে এবং দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আমি রাতে ঘুমাতে পারছিলাম না। আমরা জেগে ছিলাম এবং ভয়ে ছিলাম। যখন এখানে সহিংসতা চালানো হচ্ছিল তখন কোনও পুলিশ বাহিনী ছিল না। পুলিশ তাদের জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল… দেখা যাক সরকার আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয় কিনা।”

আরেক হিন্দু ব্যক্তি এএনআইকে বলেন, “আমরা এখানে রাষ্ট্রপতির শাসন চাই। এখানে কেবল নৈরাজ্য এবং গুন্ডামি। জুমার নামাজের পর, তারা মিছিল বের করে এবং সন্ত্রাস চালায়।”


আরেক মহিলা বলেন, “দুষ্কৃতীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের পানির ট্যাঙ্কে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে। আমরা জল পান করতে পারিনি কারণ এতে বিষ মিশিয়ে দেওয়া ছিল।”

ভিডিওটিতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন হিন্দু মহিলা মুর্শিদাবাদ থেকে ছোট বাচ্চাদের, এমনকি ৬ দিনের বাচ্চাদের নিয়ে পালিয়ে আসছেন।


বিজেপি নেতা অর্জুন সিং-এর শেয়ার করা ভিডিওতে, শত শত হিন্দুকে ধুলিয়ান থেকে নৌকায় করে গঙ্গা নদী পার হয়ে মালদায় আসতে দেখা গেছে।


একজন বয়স্ক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “নিজের জীবন বাঁচাতে তারা শহর ছেড়েছেন। দুষ্কৃতীরা সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে।”

আরেক হিন্দু মহিলার অভিযোগ, “মুসলিমদের ঘরবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেনি…‌। বেছে বেছে শুধুমাত্র হিন্দুদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে।”


আরেক হিন্দু মহিলা বলেন, “মুর্শিদাবাদে বোমা হামলা করা হচ্ছে, যার ফলে তিনি তার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।” আরেকজন মহিলা বলেন, “তারা আমাদের বলেছে যে মোদী ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস করেছেন, তাই আমরা এখানে কোনও হিন্দুকে থাকতে দেব না।”


ওই মহিলা আরও বলেন, “দুষ্কৃতীরা হিন্দুদের মায়েদের ধর্ষণ, আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের কথা বলছে। তারা আমাদের সোনার অলঙ্কার এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নিয়েছে এবং আমাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।”

আরেক মহিলা বলেন, “আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।”

তথ্যসূত্র: OP India