Thursday, May 16, 2024
সম্পাদকীয়

তিন সাগরের মিলনস্থলে এই মন্দির, পুরুষরা ঢুকলে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়

সংগ্রাম দত্ত: শিব-পার্বতী বিয়ে ভেঙেছিল ভারতের এই মন্দিরে এখন পুরুষেরা গেলে করতে হয় প্রায়শ্চিত্ত। তিন সাগর এসে মিশেছে এই মন্দিরের ঠিক তলায়। বিয়ের ফেলে দেওয়া খাবার দিয়ে তৈরি অদ্ভুত জিনিস। এ মন্দিরে পার্বতী মা চির কুমারি কারণ ভারতের এই স্থানেই ঘটে গেছিল শিব-পার্বতীর জীবনে বড় দুর্ঘটনা! কন্যাকুমারির কথা নিশ্চয় শুনেছেন কিন্তু সেখানকার এই অলৌকিক মন্দিরের কথা জানেন কি? পুরুষদের খুব সাবধানে ঢুকতে হয় এই মন্দিরে। মন্দিরে ঢোকার আগেই করে ফেলতে হয় অদ্ভুত এক কাজ। কার কারণ শিব-পার্বতীর বিয়ে ভেঙেছিল জানেন? দক্ষিণ ভারতের কন্যা কুমারীতে তিনটি সমুদ্রের মিলন স্থলে মা পার্বতীর এই মন্দির অবস্থিত। এখানে মা পার্বতী একপ্রকার পণ করেই কুমারি রূপে বিরাজমান। কন্যাকুমারী নামটি এসেছে হিন্দু দেবী কন্যাকুমারীর নামানুসারে যাঁর স্থানীয় নাম কুমারী আম্মান।

পুরানে কথিত আছে মা পার্বতী দেবাদিদেব মহাদেবকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য এখানে তপস্যা করেন। মহাদেব মার তপস্যা প্রসন্ন হয়ে মা পার্বতীকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু এদিকে বানাসুর নামে এক অসুর দেবতা ও মর্তবাসিদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। ব্রহ্মার বর অনুযায়ী একমাত্র কুমারি নারী তাকে সংহার করতে পারবে অন্যদিকে মার তো তখন বিবাহের আয়োজন চলছে কিন্তু এই বিবাহ হলে বানাসুরকে সংহার করা সম্ভব নয়। তাই দেবতারা নারদ মুনির পরামর্শে বিবাহের সময় নির্ধারণ করেন। শেষ রাত্রে বিবাহের সময় নির্ধারণ করা হয়। মহাদেব সময় অনুযায়ী দেবীকে বিবাহের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেন যখন তিনি বাল্যকাপুরম পৌঁছান তখন নারদ মুনি এক মোরগের বেশ ধরে উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করেন ঐ আওয়াজ শুনে মহাদেব ভগ্ন হৃদয়ে চলে যান তখনই মা পণ করেন তিনি চিরকুমারী হয়ে থাকবেন।

আরব সাগর, বঙ্গপোসাগর ও ভারত সাগরের মিলন স্থলের তৈরি হওয়া এই মন্দির দেখলে আপনি চোখ ফেরাতে পারবেন না। কন্যাকুমারী মন্দিরটি তামিলনাড়ু রাজ্যের কন্যাকুমারী জেলার অন্তর্গত একটি শহর। ইংরেজিতে এই শহরকে Cape Comorin বা কুমারী অন্তরীপ বলা হয়। তবে কন্যাকুমারির দেবী মন্দিরে প্রবেশের জন্য মেনে চলতে হয় বেশ কিছু নিয়ম। আনুমানিক ৩০০০ বছরের কুমারী আম্মানকে পুজো করে আসছেন হিন্দু ভক্তরা। সমুদ্র সৈকতের কিনারায় পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরে দেবী কন্যাকুমারীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মন্দিরের মুল ফটকটি উত্তর দিকে এই ফটকটি বিশেষ কয়েকটি দিন ছাড়া প্রতিদিনই খোলা থাকে। এই মন্দিরেই প্রবেশ কালে পুরুষদের গায়ের জামা খুলতে হয়। তারপরেই মন্দিরের অন্দরমহলে প্রবেশ করা যায়।

এখানে পূজা দেওয়ার আগে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমুদ্রে মন্ত্র পড়ে স্নান করে ভিজে জামা কাপড়েই প্রবেশ করতে হয় মন্দিরের ভিতরে। শোনা যায় বিয়ের দিন শিবের দেখা না পাওয়ায় কুমারী দেবীর বিয়ের দিন যা যা রান্না করা হয়েছিল তা সব ফেলে দেওয়া হয়। ভক্তরা মনে করেন, সেই সব রান্না না করা চাল, শস্য ফেলে দেওয়ায় সেখানকার সমুদ্রতট তৈরি হয়েছে।