Saturday, May 18, 2024
কলকাতাদেশ

যশোর রোডের শতবর্ষী গাছ তুলে অন্য জায়গায় লাগানোর পরামর্শ মমতার!

কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি: ইতিহাসের সাক্ষী শতবর্ষী গাছগুলো তুলে নিয়ে অন্য জায়গায় লাগিয়ে যশোর রোড সংস্কারে উদ্যোগের কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন গোটা বাড়ি তুলে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। তবে গাছ কেন তুলে অন্য জায়গায় লাগানো যাবে না।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যের প্রশাসনিক বৈঠকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের রবীন্দ্রভবনে সভাপতিত্ব করছিলেন রাজ্যটির প্রশাসনিক প্রধান। সেখানে একজন জনপ্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে যশোর রোড সংস্কারে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর ওই জনপ্রতিনিধিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতে যেন কোনো যানজট না হয়। যানজট হয় বলেই সেখানে আমরা উড়াল-সেতু করতে চাইছি। কিন্তু সেটা আদালত আটকে দিয়েছে।”

এসময় মুখ্যমন্ত্রী ওই জনপ্রতিনিধিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আদালতকে বলো গাছগুলোকে আমরা এক জায়গা থেকে উঠিয়ে অন্য জায়গায় লাগিয়ে দেবো। এখন তো পদ্ধতি আছে। বাড়ি তুলে অন্য জায়গায় বসিয়ে দিচ্ছে। গাছগুলো আমরা তো নষ্ট করছি না। রাস্তা করবো বলে আমরা একটি গাছকে এক জায়গা থেকে তুলে আরেক জায়গা লাগিয়ে দিচ্ছি। আদালতকে সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে।”

ওই জনপ্রতিনিধিকে দিকনির্দেশনা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যারা মামলা করেছে তাদের বলো যাতে তারা মামলা তুলে নেন। কথা বলে দেখো, কথা বললে অনেক কিছুই ঠিক হয়ে যায়। নিজের এলাকা- তাই নিজেকেই তো দেখতে হবে সেটা, মুখ্যমন্ত্রী একথাও বলেন।

যদিও মমতার এই দাবি যুক্তিহীন এবং অবান্তর বলে দাবি করেছেন যশোর রোডের গাছ বাঁচানোর পক্ষে পরিবেশপ্রেমী আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র রাহুল দেববিশ্বাস। তাঁর ভাষায়, এভারেস্ট তো এভারেস্টই। তাকে ইচ্ছা করলেই এক জায়গা থেকে তুলে অন্য জায়গায় লাগানো যায় না। তেমনই যশোর রোড যশোর রোড-ই। এর ঐতিহ্য স্থানান্তরিত হয় না।

রাহুল দেববিশ্বাস জানান, “যশোর রোডের গাছগুলো এতো বড় যে সেগুলো কোনোভাবেই তুলে অন্য জায়গায় লাগানো সম্ভব নয়। তাছাড়াও, তুলতে গেলে যে পরিমাণ জায়গা গর্ত করতে হবে তাতে গোটা রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে। আর গাছগুলো সরিয়ে নিলে পাখিরা তাদের আবাসস্থল হারাবো। ফলে এই ধরনের উদ্যোগ কোনোভাবেই আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।” তিনি আরো বলেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সঠিকভাবে অবগত করা হয়নি। নইলে এই ধরনের দিক নির্দেশনা তিনি দিতেন না।

প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এবং স্থানীয় সাংসদসহ অন্যান্য পদাধিকারীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণের জন্য দুই হাজার ৩১২টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। বহু বছরের পুরোনো অনেক গাছসহ বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে মহাসড়ক সম্প্রসারণের ওই কাজ শুরুর উদ্যোগের খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশজুড়ে চলে প্রতিবাদ। গাছ কাটা, না কাটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। পরে গত ১৮ জানুয়ারি যশোর রোডকে চারলেনে উন্নীত করতে গিয়ে সেখান থাকা শতবর্ষী গাছ কাটার ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।