Sunday, May 19, 2024
আন্তর্জাতিক

করোনা মোকাবিলায় ৪ উপায় বাতালেন বিশেষজ্ঞ দেবী শ্রীধর

লন্ডন: বর্তমানে গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাস (Coronavirus) মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে এর মধ্যে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করে চলেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দেবী শ্রীধর (Devi Sridhar) করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চারটি উপায়ের কথা বলেছেন।

উপায়গুলি হলো বৈশ্বিক সহযোগিতা, একযোগে লকডাউন ও যোগাযোগ শনাক্ত করার প্রক্রিয়া ও চিকিৎসা। এ পদ্ধতিগুলো যথাযথ প্রয়োগ করা গেলে তা মহামারি ঠেকানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলেই মনে করছেন দেবী শ্রীধর। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান‘কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বিশেষ চারটি পদ্ধতির কথা তুলে ধরেছেন তিনি।

অধ্যাপক দেবী শ্রীধর বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে চিনের উহানে নতুন ভাইরাস হিসেবে একটি ভাইরাসের উৎপত্তির পর তা দ্রুত শনাক্ত করে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় দেশটি। ভাইরাস নির্মূলের জন্য অভূতপূর্ব অভিযান চালানোর পাশাপাশি দেশ থেকে যাতে কেউ বের হতে না পারে, এর চেষ্টাও করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং ও সিঙ্গাপুরও ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিল।

দেবী শ্রীধর বলেন, এ দেশগুলোতে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সংক্রমিত ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করা, তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে পৃথক করে ফেলার মতো ব্যবস্থা নিয়েছিল। এতে দেখা যায় পরীক্ষা, শনাক্ত ও পৃথককরণ—এ তিনটি কৌশল ঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যায়।

প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে (America) ৪ লাখের বেশি আক্রান্ত ও ১৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসাবে চিনকে (China) ছাড়িয়ে গেছে আমেরিকা।

দেবী শ্রীধর

দেবী শ্রীধর বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা জানি না যে করোনায় ঠিক কি পরিমাণ জনসংখ্যা ইতিমধ্যে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষা ছাড়া কারও মধ্যে ভাইরাস রয়েছে কি না বা কেউ প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করেছেন কি না, তা জানা সম্ভব নয়। কোনও উপসর্গ দেখানো ছাড়াই কতজন এ ভাইরাস বহন করছে, তাও পরিষ্কার নয়। এছাড়া শিশুদের আক্রান্ত হওয়া নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।

করোনা প্রতিরোধ নিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত করোনার বিরুদ্ধে গৃহীত মডেল ও বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চারটি সম্ভাব্য প্রতিরোধের বিষয়টি সামনে তুলে আনা যেতে পারে। প্রথম উপায়টি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সরকারকে একত্রে এ ভাইরাস নির্মূলের একটি পরিকল্পনা নিয়ে একযোগে পরিকল্পনা করতে হবে। দ্রুত ও সাশ্রয়ী চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে। রোগের একাধিক তরঙ্গ যাতে আঘাত না করে, সে জন্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি হতে পারে– ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টিকে দেরি করিয়ে দেওয়া। যেহেতু বিশ্বজুড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে এবং কিছুদিন পরেই হয়তো তা পাওয়া যাবে। সে পর্যন্ত ভাইরাসের বিস্তার যতটা সম্ভব সীমিত রাখতে হবে। ইতিমধ্যে অনেকগুলি ভ্যাকসিন আশা দেখাচ্ছে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হয়তো ভ্যাকসিন চলে আসতে পারে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে লকডাউনসহ চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। যথেষ্ট বেড, ভেন্টিলেটর ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত রাখতে হবে। এসব ব্যবস্থার ভিত্তিতে সরকার কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা শিথিল করবে নাকি বাড়াবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। লকডাউন (Lockdown) পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মূল্য অনেক বেশি দিতে হবে। বারবার লকডাউন দিয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি ও সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। দরিদ্র দেশগুলোতে অপুষ্টি, পানীয় জলের অভাবে সৃষ্ট রোগে অনেকে মারা যেতে পারে।

তৃতীয় সম্ভাব্য উপায় হতে পারে– দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) মতো যত বেশি সম্ভব করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে পৃথক করে ফেলা। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে রাখা। এ জন্য বিশাল পরিকল্পনা, দ্রুত বাস্তবায়ন ও সংস্পর্শ শনাক্তকারী অ্যাপ প্রয়োজন। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবী কাজে লাগিয়ে নমুনা সংগ্রহ, ফলপ্রক্রিয়া ও কোয়ারেন্টিন নজরদারিতে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারলে স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমের ওপর চাপ কমে।

চতুর্থ উপায় হতে পারে– দ্রুত একটি কার্যকরী টিকার অনুপস্থিতিতে করোনার লক্ষণগুলোর চিকিৎসা করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীরা অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি পরিচালনা করতে পারে, যাতে রোগীর অবস্থার অবনতি না হয়। এর চেয়েও ভালো সমাধান হতে পারে কোভিড-১৯ শুরু হওয়া রোধ করতে প্রোফিল্যাকটিক থেরাপি ব্যবহার করা। এ ছাড়া আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করতে দ্রুত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যেসব দেশে যথেষ্ট সম্পদ আছে, তাদের জন্য এটি টেকসই হতে পারে। তবে দরিদ্র দেশগুলোতে এটা করা কঠিন।