Monday, April 29, 2024
কলকাতাদেশ

মেটিয়াবুরুজে আজও ঢুকতে পারে না কলকাতা পুলিশ

কলকাতা: খিদিরপুর গার্ডেনরিচ মেটিয়াবুরুজ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাটিতে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে এক কিশোরীকে। অভিযুক্তদের নাম, ধাম এবং মোবাইল নম্বর জানা সত্ত্বেও তাকে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে যাচ্ছে না পুলিশ। এমনই অভিযোগ উঠেছে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী অপহৃত কিশোরীর বাবা কলকাতা পুরসভার কর্মী বিনোদ দাস। তাঁর অভিযোগ, নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে আটকে রেখেছে মিন্টু। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হল। কিন্তু পুলিশ বলছে তাদের সেখানে যাওয়া সম্ভব নয় যেখানে রয়েছে মেয়েটি। কিন্তু কেন মিন্টুর ডেরায় হানা দিতে ভয় পাচ্ছে পুলিশ?

খিদিরপুর-গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ কি কলকাতার বাইরে? পশ্চমবঙ্গের বাইরে? তাহলে কেন সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায় কলকাতা পুলিশ? কেন সেখানে অভিযানে যাওয়ার অনুমতিই পায় না লালবাজার? সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কি চটাতে চায় না কোন শাসক দলই? এই নিয়েই কলকাতা হাইকোর্টে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে লালবাজার। হাইকোর্টের বিচারপতির সেই একই প্রশ্ন এবার সাধারন মানুষের মনেও। কেন মেটিয়াবুরুজে মিন্টুর ডেরায় হানা দিতে ভয় পাচ্ছে পুলিশ?

মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল অপহৃত কিশোরীর। গত বছরের জুন মাসের নয় তারিখে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যায় মেয়েটি। মা মারা যাওয়ার পর থেকে গার্ডেনরিচের মেহর মঞ্জিল এলাকায় মাসির বাড়িতেই থাকতো ওই কিশোরী। সেখান থেকেই নিখোঁজ হয় মেয়েটি। অনেক খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি। ঘটনার পরদিন সকালে বিনোদ জানতে পারেন মেটিয়াবুরুজ এলাকার এক দুষ্কৃতি মিন্টু ও তারা বাবা কোরবান আলি জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছে তার মেয়েকে। এরপর এলাকাবাসীদের নিয়ে গার্ডেনরিচ থানায় যান বিনোদ।

মিন্টু ও তার বাবা কোরবান আলির বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ করেন। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হল। কিন্তু ঘটনার পর আট মাস কেটে গেলেও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছে না পুলিশ। কিন্তু পুলিশ বলছে তাদের সেখানে যাওয়া সম্ভব নয় যেখানে রয়েছে মেয়েটি। পুলিশি উদাসীনতায় হতভাগ্য বাবা-মা আট মাস ধরে থানা-পুলিশ আর ঘর করেছেন। কিন্তু ফিরে পাননি মেয়ে। শেষে আদালতের শ্মরণাপন্ন। বিচারপতি দেবাংশু বসাক অপরাধ দমন শাখার যুগ্ম কমশনারকে নির্দেশ দিলেন এখনই মেয়েটিকে উদ্ধার করতে।

বিনোদবাবুর আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট করে ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেওয়ার পরেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কলকাতা পুলিশ। মেয়েটিকে সেখানে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে একথা বারবার পুলিশকে জানানোর পরেও দীর্ঘ আট মাস কেটে গেলেও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছে না পুলিশ। ওই আইনজীবী আরো জানিয়েছেন, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় অভিযান চালানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

এই ধরনের মারাত্মক অভিযোগ শুনে নড়েচড়ে বসে কলকাতা হাইকোর্ট। সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেও তাঁর যুক্তি ধোপে টেকেনি হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের সামনে। অভিযুক্তদের হেফাজত থেকে অপহৃত ওই কিশোরীকে অবিলম্বে উদ্ধার করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে বিশেষ দল গঠন করে মেটিয়াবুরুজে মিন্টুর ডেরায় অভিযান চালিয়ে বিনোদবাবুর মেয়েকে উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক।