Tuesday, March 25, 2025
Latestরাজ্য​

‘পশ্চিমবঙ্গে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে হিন্দু জনসংখ্যা’, সঙ্ঘের কর্মসূচিতে গিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ শুভেন্দুর 

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ক্রমেই নতুন মাত্রা নিচ্ছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, তিনি শুধুমাত্র হিন্দুদের ভোটে বিধায়ক হয়েছেন, অন্য কোনও সম্প্রদায়ের ভোটে নয়। শুধু তাই নয়, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য হিন্দু ভোট আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন তিনি। এবার সেই বক্তব্যকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আরএসএসের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) ‘সমন্বয় বর্গ’ কর্মসূচিতে তিনি সরাসরি হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।

উলুবেড়িয়ায় সংঘের প্রশিক্ষণ শিবির

গত ১ ও ২ মার্চ হাওড়ার উলুবেড়িয়ার তাঁতিবেড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হয় আরএসএসের ‘সমন্বয় বর্গ’। এই কর্মসূচি মূলত সংঘের শীর্ষ নেতৃত্বের অধীনে বিজেপি ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য একটি ‘প্রশিক্ষণ শিবির’। আরএসএসের অধীনে থাকা ৫৬টি সংগঠনের মধ্যে ৩৬টি পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয়। শিবিরে বিজেপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সুনীল বনসল, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ-সহ প্রায় ২০ জন নেতা। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে উপস্থিত ছিলেন সংঘের দুই সহ সরকার্যবাহ রামদত্ত চক্রধর এবং অরুণ কুমার।

শুভেন্দুর উদ্বেগ: হিন্দু জনসংখ্যা কমছে?

শিবিরের প্রথম দিন, ১ মার্চ, আরএসএস নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ঘণ্টাখানেকের মত বিনিময় সভা হয়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমলেও, হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেই হার আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

শুভেন্দু কয়েকটি কারণ তুলে ধরেন, যা হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন—

1. বিয়ে না করার প্রবণতা বৃদ্ধি: হিন্দু তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ে না করার হার বেড়েছে।

2. লিভ-ইন সম্পর্কের সংখ্যা বৃদ্ধি: অনেকেই এখন বৈবাহিক সম্পর্কের পরিবর্তে লিভ-ইন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন।

3. সন্তান ধারণে অনাগ্রহ: অনেক দম্পতি সন্তান নিতে চান না বা শুধু একটি সন্তান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকছেন।

শুভেন্দুর এই বক্তব্যের সঙ্গে আরএসএস নেতৃত্বও সহমত পোষণ করে। শিবিরে সংঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিব গোলওয়ালকরের জনসংখ্যা সংক্রান্ত পুরনো বক্তব্য নতুন করে তুলে ধরা হয়।

হিন্দু ভোটব্যাংকের রাজনীতি ও ২০২৬ সালের লক্ষ্য

শুভেন্দুর বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি আরও আক্রমণাত্মকভাবে ‘হিন্দু ভোট ব্যাংক’ সুসংহত করতে চাইছে। তিনি প্রকাশ্যেই বলছেন, বিজেপির জয়লাভের জন্য হিন্দু ভোট ৫% বাড়ানো প্রয়োজন। রাজ্যের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শুভেন্দুর এই বক্তব্য তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির ‘পোলারাইজেশন’ কৌশলের অংশ।

বিতর্ক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

শুভেন্দুর এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি ‘ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি’ করছে। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “বাংলার সংস্কৃতি বিভাজনের নয়, সম্প্রীতির। বিজেপি এখানে ধর্মের নামে ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা করছে।”

অন্যদিকে, বাম ও কংগ্রেসও বিজেপির এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে। সিপিএমের এক নেতা বলেন, “বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু বাংলার মানুষ এসব বরদাস্ত করবে না।”

হিন্দু ভোট এককাট্টা করতেই চাইছে গেরুয়া শিবির 

শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক বক্তব্য স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, বিজেপি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দু ভোট এককাট্টা করতেই চাইছে। শুধু ভোট বাড়ানো নয়, হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রসঙ্গও আলোচনায়।