Wednesday, May 8, 2024
শিক্ষাঙ্গন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেরা ২০টি উক্তি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তাঁর কবিতার বহু পঙ্‌ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “নীললোহিত”, “সনাতন পাঠক”, “নীল উপাধ্যায়” ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।

১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি “কাকাবাবু-সন্তু” নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ২০টি উক্তি:

১. অন্ধকার শ্মশানে ভীরু ভয় পায় সাধক সেখানে সিদ্ধি লাভ করে।

২. আত্মগোপন করতে গিয়ে কিছুদিন পর অনেকে আত্মপরিচয়টাই ভুলে যায়।

৩. কৃতজ্ঞতা একটা বিষম বোঝা। অনেকেই সারাজীবন এ বোঝা বহনে অক্ষম। তাই এই বোঝা ঝেড়ে ফেলে উপকারী ব্যক্তির শত্রুতা করে তারা স্বস্তি বোধ করে।

৪. ঘটনার চেয়ে রটনার রূপ অনেক বেশী বিচিত্র এবং গতিবেগও প্রচন্ড।

৫. মানুষই মানুষকে বাঁচায়, মানুষই মানুষকে মারে। মানুষই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, আবার মানুষই এই বিভেদের রেখা মুছে ফেলতেও পারে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

৬. বিশ্বাসে-শ্রদ্ধায়-ভক্তিতে কেউ যখন নিমগ্ন থাকে তখন তাকে দেখতে বড় ভালো লাগে। চোখ বুজে কেউ ধ্যান করছে,এই দৃশ্যটা দেখলে আমার এখনও শ্রদ্ধা হয়, সে যারই ধ্যান করুক না কেন।

৭. প্রতি সন্ধ্যেবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।

৮. কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতন মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে দুটো চারটে নিয়ম কানুন ভেঙে ফেলি পায়ের তলায় আছড়ে ফেলি মাথার মুকুট যাদের পায়ের তলায় আছি, তাদের মাথায় চড়ে বসি কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতই ইচ্ছে করে অবহেলায় ধর্মতলায় দিন দুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি।

৯. বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুনা বলেছিল, যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!

১০. ইচ্ছে করে দুপুর রোদে ব্লাক আউটের হুকুম দেবার ইচ্ছে করে বিবৃতি দিই ভাঁওতা মেলে জনসেবার ইচ্ছে করে ভাঁওতাবাজ নেতার মুখে চুনকালি দিই।

১১. দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড় বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টি নীলপদ্ম! তবুও কথা রাখেনি বরুনা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ এখনো সে যে-কোনো নারী!

১২. ইচ্ছে করে অফিস যাবার নাম করে যাই বেলুড় মঠে ইচ্ছে করে ধর্মাধর্ম নিলাম করি মুর্গীহাটায় বেলুন কিনি বেলুন ফাটাই, কাঁচের চুড়ি দেখলে ভাঙি ইচ্ছে করে লণ্ডভণ্ড করি এবার পৃথিবীটাকে মনুমেন্টের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে বলি আমরা কিছু ভাল্লাগে না।

১৩. আমাকে বিক্রির টাকা হক্কের টাকা আর আমার রোজগারের টাকা নোংরা টাকা।

১৪. কারোর আসার কথা ছিল না কেউ আসেনি তবু কেন মন খারাপ হয়?

১৫. সাহিত্য একটা তীব্র নেশা, রক্তের সঙ্গে মিশে যায়, যাকে একবার এই নেশা ধরে, তার আর অন্য কোনো গতি থাকে না। আবার এ কথাও হয়তো ঠিক, অনেক লেখুই এক এক সময় এই নেশা থেকে মুক্তি পেতে চায়! সাহিত্য সৃষ্টিতে খ্যাতি-কীর্তি-অর্থের সম্ভাবনা আছে বটে, কিন্তু তার জন্য লেখককে ভেতরে ভেতরে কত কষ্ট যে সহ্য করতে হয়! এক একসময় রক্ত ক্ষরণের মধ্যে মিশে যায় শব্দের বিষ, তা অন্যদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়

১৬. পিতৃশ্রাদ্ধ করতে প্রতাপ শেষবার গিয়েছিলেন মালখানগরে। প্রতাপ শক্ত চরিত্রের মানুষ, সবাই তাকে তেজস্বী পুরুষ হিসেবে মানে, কিন্তু সেবার তিনি খুব কান্নাকাটি করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেল, মাটি থেকে উপড়ে তোলা হলো এক বর্ধিষ্ণু বৃক্ষের শিকড়। পূর্ববাংলার এই নদীময় প্রান্তর, এই মিষ্টি বাতাস, খেজুর রসের স্বাদের মতন ভোর, ঠাকুমার গল্পের আমেজমাখা সন্ধ্যা, এসব আর দেখা হবে না। এরপর থেকে কলকাতায় ভাড়াটে বাড়ির অন্ধকার ঘুপচি ঘরে চির নির্বাসন।

১৭. ইংরেজের এই ন্যায়বিচারের প্রতীক ঐ সুপ্রিম কোর্টের চূড়া। লোকে এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ভক্তিভরে সেদিকে তাকায়। এখনো কেউ জানে না যে বিচার ব্যাবস্থার এই আড়ম্বর ইংরেজ জাতির একটি বিলাসিতা মাত্র। প্রয়োজনের সময় এইসব বিলাসিতা ছেঁটে ফেলতে তারা একটুও দ্বিধা করে না।

১৮. বাঙালিরা ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করে, ধর্মসংস্কারের ব্যাপারে কেউ কিছু বললেই গেল গেল রব তোলে, কিন্তু এই বাঙ্গালিরাই ব্যক্তি জীবনে ধর্মের প্রায় কোন নির্দেশই মানে না। সততা, পবিত্রতা, সেবা এই সব ব্যাপারে তারা প্রায় অধার্মিক। বাঙালিরা খুব পরের সমালোচনা করে, পরনিন্দা করে কিন্তু আত্মসমালোচনা করে না। বাইরে খুব উদার মত প্রচার করে, নিজের পরিবারের মধ্যে অতি রক্ষনশীল। খবরের কাগজে তর্জন গর্জন দেখলে মনে হবে খুব সাহসী, আসলে অত্যন্ত ভীরু।

১৯. তারপর ওরা হাত ধরে চুপ করে বসে রইলো। আর কোনো কথা নেই, সমস্ত কথার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। ওরা বসেই রইলো। ঘাট ক্রমশ নির্জন হয়ে আসছে। বাতাস বইছে বেশ জোরে। বজরাগুলো ও ফিরে যাচ্ছে। সবাই ঘরে ফিরছে। এই দুজনের যেন কোনো ঘরবাড়ি নেই, কথাও ফিরতে হবেনা। এরকম একটি অনন্তকালের দৃশ্য হয়ে ওরা বসেই থাকবে।

২০. স্তব্ধ আঁধারে কিছুই যায় না দেখা হে আকাশ তবু ঊষার হৃদয় জ্বালো কোথায় গেল সে দৃষ্টি-পাগল একা খুঁজতে সে কোন আঁধার পারের আলো।