ধর্মীয় পরিচয় জেনে বেছে বেছে হত্যা, কাশ্মীরে জঙ্গিদের হত্যালীলায় মৃত অন্তত ২৮ পর্যটক
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পুলওয়ামা কান্ডের স্মৃতি মনে করিয়ে দিল জঙ্গিরা। এবার নিশানা পর্যটক, স্থান— অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁও। নিহত অন্তত ২৮ পর্যটক। মৃতদের মধ্যে ২ জন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন। একের পর এক গুলি, আতঙ্কে চিৎকার, রক্তে ভেসে যাওয়া রিসর্ট, আর সেই ভয়াল অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন এক নারী: “স্বামীকে গুলি করে মেরে ফেলার পর আমি কাঁদছিলাম। চিৎকার করে বললাম, আমাকেও মারো। তখন মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে জঙ্গিরা বলল, ‘তোমার স্বামীকে মেরেছি। তুমি এখন গিয়ে মোদীকে বলো।’”
এই নারকীয় ঘটনার একাধিক ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কান্না, হাহাকার আর বিভীষিকার সেই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
২৬ জনের মৃত্যু, ধর্মীয় পরিচয় দেখে টার্গেট করার অভিযোগ
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পহেলগাঁও হামলায় অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ধর্মীয় পরিচয় দেখে দেখে আক্রমণ চালিয়েছে জঙ্গিরা। তাদের লক্ষ্য ছিল মূলত অমুসলিম পর্যটকরা।
স্থানীয় সূত্রের মতে, হামলাকারীরা সেনার পোশাক পরে এসেছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। এই হামলায় একটি জনপ্রিয় রিসর্ট কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাশ্মীরে অমিত শাহ
সৌদি আরবে সফররত অবস্থায় খবর পেয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তাঁকে তৎক্ষণাৎ কাশ্মীরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। শাহ ইতিমধ্যেই শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
শ্রীনগরে পৌঁছেই সেনা ও গোয়েন্দা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অমিত শাহ। জানতে চাওয়া হবে—
- কীভাবে এই হামলা ঘটল?
- কোনও গোয়েন্দা তথ্য আগাম ছিল কি না?
- নিরাপত্তার এই ভয়াবহ ফাঁক কেন তৈরি হল?
লস্করের ছায়া সংগঠন ‘টিআরএফ’ হামলার দায় স্বীকার
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)। এই সংগঠন মূলত স্থানীয় কাশ্মীরিদের ব্রেনওয়াশ করে জঙ্গি হিসাবে নিয়োগ করে এবং বহু দিন ধরেই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
পুলওয়ামার পর সবচেয়ে বড় হামলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলওয়ামার পর এটাই ভারতের বুকে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা, অন্তত প্রাণহানির দিক থেকে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হন। সেই ভয়াবহতার স্মৃতি আরও একবার মনে করিয়ে দিল।
এই ঘটনার পর পহেলগাঁও-সহ উপত্যকার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র এবং অমরনাথ যাত্রার রুটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।