Sunday, September 15, 2024
কলকাতা

র‌্যাগিংয়ের জেরে মৃত্যু স্বপ্নদীপের? কি বলছে তার সতীর্থরা?

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। মৃত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ র‌্যাগিংয়ের জেরে মৃত্যু হয়েছে স্বপ্নদীপের। বুধবার সন্ধ্যায় মা এবং বাবাকে ফোন করেছিল বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া। স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডু ফোনে বাড়িতে বলেছিল, ‘‌আমি খুব চাপে আছি বাবা। তোমরা এসে আমাকে বাঁচাও।’

স্বপ্নদীপের সহপাঠীরা কি বলছে বন্ধুর রহস্য মৃত্যুতে? র‌্যাগিংয়ের ভয়াবহ চিত্রকে তুলে ধরেছেন জিওলজি বিভাগের অর্পণ মাঝি। অর্পণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

ফেসবুকে অর্পণ লিখেছেন, ‘‘আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা একটি পরিবার এবং আমি আসানসোলে বড় হয়েছি। স্বাভাবিক ভাবেই আমি ভর্তির সময় হস্টেলের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর পরের দু-তিন রাতেই হস্টেল আমার মধ্যে বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে। এখন আমি অনেক কষ্ট করেই, ধার নিয়ে হলেও মেস খুঁজছি।’’

অর্পণ লিখেছেন, ‘‘সমাজের প্রতিটি স্তরে ক্ষমতা প্রদর্শন আছে, কিন্তু যাদবপুর মেইন হস্টেলের কিছু দাদা’ও যে এই একই কাজ করবে তা আমার কল্পনার অতীত। মাথায় একটি স্পেসিফিক ছাঁটের চুল কাটতে বলা, সন্ধ্যে ৬ টার মধ্যে হস্টেলে ঢুকতেই হবে, সিনিয়র দের ক্রমাগত ফাইফরমাশ খাটা, সারারাত জাগিয়ে রেখে ইন্ট্রো নেওয়া (শুনতে পারছি যে এখনও আসল ইন্ট্রো নেওয়াই হয়নি)। এগুলো ওই তিন রাত আমার সাথে চলছে, এবং আমি ভীত।”

অর্পণ আরও লিখেছেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে সব থেকে গণতান্ত্রিক লড়াকু একটি বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানে, এরাই পথ দেখায়। কিন্তু সমাজের যে ক্ষমতা কাঠামো, সংখ্যা গুরু ধর্মের সংখ্যা লঘু দের উপর। পুরুষদের মহিলাদের উপর, আমাদের দেশের উঁচু জাতের নীচু জাতের প্রতি। ক্ষমতাবান সিনিয়রদের (ইউনিয়ন লীডারদের মদতপুষ্ট) জুনিয়র দের প্রতি। এর ব্যাতিক্রম আমার অভিজ্ঞতা হলো না।”

অর্পণ লিখেছেন, “মেইন হস্টেল নিয়ে আমি অনেক গল্প শুনেছি। বন্যার্তদের সাহায্যে গল্প, কোরেন্টাইনের সময় অসহায় মানুষের পাশে থাকা। যাদবপুর থানার নানা দাদাগিরির বিরুদ্ধে সারাদিন সারারাতের ঘেরাও। আমি বিশ্বাস করি মেইন হস্টেলের বেশিরভাগ দাদাই এই লড়াকু ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু কিছু জনের জন্য আমি আমার সহপাঠীকে হারালাম। সচেতন সংবেদনশীল সহমর্মী দাদাদের কাছে আমার আহ্বান এই র‍্যাগিং’র মত নগ্ন ক্ষমতা প্রদর্শন কে বিচ্ছিন্ন করার সংগ্রামে পথ দেখাতে, যেভাবে অন্য সংকটে তারা দেখিয়েছি। এবং ইউনিয়ন লিডারশীপ দুচারটি ভোটের জন্যএই ক্ষমতাকেন্দ্রকে বাঁচিয়ে রাখার যে আপোষ সেই পথ থেকে সরে আসতে। নাহলে তৃনমূল বিজেপি সিপিএম’র সাথে আসলে কোনো তফাৎ হয়না। তারা ভোটব্যাংক বাঁচাতে হিন্দুত্ব সংখ্যাগুরুবাদ কে বকলমে সমর্থন দিচ্ছে আর এখানে দুটো ‘ভোট ঘুরে যাবে’ বলে প্রকাশ্যে ক্ষমতা- ধর্ষকামী (sadistic pleasure) মনোভাব কে লালন করা হচ্ছে। আজ অবধী ইউনিয়ন থেকে কোনো প্রচার দেখলাম না, বরং এমন ঘটনা শুনেছি বড় মাঠে র‍্যাগ দেওয়ার পর ইউনিয়ন দাদারা খাপের মতো করে আপোষ করে নিতে বলেছে।’’