যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ আউটপোস্ট, ২৪ ঘন্টা প্রহরা, কর্তৃপক্ষকে চিঠি লালবাজারের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: কলকাতার অন্যতম বিদ্যাপীঠ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও উত্তাল পরিস্থিতি। সম্প্রতি লালবাজার থানার তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে স্থায়ী পুলিশ আউটপোস্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
গত ১ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি ঘিরে চলা বিক্ষোভ, গাড়ির কাচ ভাঙা এবং ছাত্রদের প্রাণপণ গাড়ি আটকানোর প্রচেষ্টা—এই সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি তপ্ত হয়ে ওঠে। চলন্ত গাড়ির বনেটে উঠে বসা এবং এক ছাত্রের গাড়ির নিচে পড়ে গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসে। প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়ের গুরুতর আহত হওয়া নিয়েও রাজ্য রাজনীতিতে প্রবল জলঘোলা হয়।
এই ঘটনার পরেই সোমবার সাদা পোশাকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশ। এমনকি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভেতরেও ঢুকে পড়ে। ছাত্রছাত্রীদের একাংশ এই ঘটনায় তীব্র আপত্তি জানায়। পুলিশের প্রবেশ শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে পড়ুয়াদের একাংশ।
আউটপোস্ট তৈরির সিদ্ধান্ত
ঘটনার রেশ না কাটতেই লালবাজার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে জানায়, ক্যাম্পাসের মধ্যে কোথায় পুলিশ আউটপোস্ট স্থাপন করা যায়, তা চিহ্নিত করতে হবে। আউটপোস্ট তৈরির সিদ্ধান্তের ফলে ২৪ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি প্রহরা থাকবে।
আন্দোলনের স্মৃতি ও বিতর্ক
প্রায় ১০ বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ প্রবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল। সেই সময়ে তৎকালীন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, শিক্ষাঙ্গনে পুলিশি হস্তক্ষেপ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করবে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেবে।
পড়ুয়াদের অবস্থান
মঙ্গলবার প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের মধ্যে বৈঠক হয়। পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে দাবিদাওয়ার স্মারকলিপি পেশ করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। আন্দোলনকারীদের দাবি, আউটপোস্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হানবে।
নিরাপত্তা নাকি নিয়ন্ত্রণ?
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের যুক্তি, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও শিক্ষামন্ত্রীর ওপর আক্রমণের ঘটনার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। তবে শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, এটি ভবিষ্যতে মত প্রকাশ ও স্বাধীন চিন্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
দেশবিরোধী কার্যকলাপের আঁতুড়ঘর
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে বিভিন্ন ধরনের দেশবিরোধী ও হিন্দুবিরোধী স্লোগানের চিত্র বারবার উঠে এসেছে। কাশ্মীরের স্বাধীনতাও দাবি করেছে তারা। পুলিশের তরবে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
সিসিটিভি নিয়েও আপত্তি পড়ুয়াদের একাংশের
একের পর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর দাবি উঠেছিল। কিন্তু পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, এতে তাদের প্রাইভেসি নষ্ট হবে। প্রশ্ন উঠছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কী এমন হয়ে থাকে যাতে প্রাইভেসি নষ্ট হবে?
বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
এর আগেও একাধিকবার শিরোনামে উঠে এসেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। স্বপ্নদ্বীপ হত্যা কান্ডের পরেও নানা ঘটনা ঘটেছে। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, জেনারেল বডি (জিবি) মিটিংয়ের নামে হেনস্থা করা হয় তাদের। বামমনষ্ক পড়ুয়া বাদে বাকিরা ব্যাপকহারে হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন ক্যাম্পাসে। সন্ধ্যা হলেই ক্যাম্পাসে মদ, গাঁজার আসর বসে। পুলিশ মোতায়েন করা হলে এইসমস্ত সমস্যা দূর হবে।