রমজানের মধ্যেই গাজায় ভয়াবহ হামলা ইসরায়েলের, নিহত ২০০ প্যালেস্তিনীয়
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে গাজা ভূখণ্ডে চলমান সংঘর্ষ নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রতিক ইজরায়েলি হামলায় প্রায় ২০০ জন প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন। ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে মঙ্গলবার ভোরে গাজাজুড়ে একাধিক টার্গেটে আঘাত হানা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির অচলাবস্থা ও ইজরায়েলের হামলা
গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে ইতিবাচক কোনো সমাধান আসার আগেই ইজরায়েলের এই আক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় তিনটি বাড়ি, গাজা সিটির একটি ভবন এবং খান ইউনিস ও রাফাহ এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। প্যালেস্তিনীয় সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানিয়েছে যে গাজায় অন্তত ৩৫টি বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়া ও ট্রাম্পের ভূমিকা
ইজরায়েলের এই হামলার পর প্রশ্ন উঠেছে, আমেরিকার অজ্ঞাতসারে কি গাজায় অভিযান চালানো হয়েছে? হোয়াইট হাউজ স্পষ্ট জানিয়েছে, ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেই হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হামাসের পালটা হুঁশিয়ারি
ইজরায়েলি হামলার জবাবে হামাস পালটা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। হামাস বলেছে, ইজরায়েল তাদের দেশের বন্দিদের মুক্তির আশা ত্যাগ করেছে বলে মনে হচ্ছে। সংগঠনটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তারা এই হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত।
যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যর্থ?
গত জানুয়ারি থেকে তিন দফা যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার চেষ্টা করা হলেও ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে মতবিরোধ চলছেই। আমেরিকা এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা চলছিল। কিন্তু এই হামলার মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হলো।
গাজা যুদ্ধের পূর্বাপর ও সংঘাতের কারণ
গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের জঙ্গি গোষ্ঠী আচমকাই গাজা ভূখণ্ড থেকে ইজরায়েলে ঢুকে পড়ে। সাধারণ মানুষকে হত্যা ও অপহরণ করার পাশাপাশি লেবানন থেকেও ইজরায়েলে হামলা চালানো হয়। অভিযোগ ছিল, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী লেবানন থেকে আক্রমণ চালিয়েছে। পালটা জবাবে ইজরায়েলি বাহিনী গাজায় ঢুকে হামাসকে তাড়া করে।
এই উত্তেজনার মধ্যে ইরানও মিসাইল হামলা চালায় ইজরায়েলে। ইরানে অবস্থানরত হামাস প্রধান ইয়াহিয়া শিনওয়ারিকে খতম করে ইজরায়েলি বাহিনী। সংঘর্ষে গাজা যুদ্ধে প্রায় ৫৩ হাজার প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন, অন্যদিকে হামাসের আক্রমণে নিহত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার ইজরায়েলি।
মার্কিন ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সাল থেকে হামাসকে “বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন” হিসেবে চিহ্নিত করেছে আমেরিকা এবং তাদের বেশ কিছু মিত্র রাষ্ট্র। তবে মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েলের এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বমঞ্চে সমালোচনা বাড়ছে।
শান্তি প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা
গাজা যুদ্ধের সাম্প্রতিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা দিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একদিকে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা সময়ই বলে দেবে।