Wednesday, April 23, 2025
Latestদেশ

বয়স কোনো বাধা নয়, ৫৯ তেই এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে কেরলের বসন্তী

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: যে বয়সে বাকিরা রান্নাবান্না কিংবা ঘর সংসার সামলাতে ব্যস্ত। ঠিক তখনই ৫৯ বছর বয়সেই এভারেস্টের বেস ক্যাম্প পৌঁছলেন বসন্তী চেরুভিত্তিল। কেরলের বাসিন্দা বসন্তী পেশায় দর্জি। ৫৯ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই একা একা এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে পাড়ি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি।

দৃঢ় সংকল্প এবং স্ব-শিক্ষা

কান্নুরের থালিপ্পারাম্বার বাসিন্দা বসন্তী দৃঢ় সংকল্প এবং স্ব-শিক্ষার মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধন করেছেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নেপালের সুরকে থেকে ট্রেকিং শুরু করে ২৩ ফেব্রুয়ারি এভারেস্টের সাউথ বেস ক্যাম্পে পৌঁছন তিনি।

৪ মাস ধরে কঠোর প্রশিক্ষণ

জানা গেছে, ৪ মাস ধরে কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একতা নিজেকে তৈরি করেছিলেন এই দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য। প্রতিদিন তিন ঘণ্টা হাঁটা, ট্রেকিং বুট পরে অনুশীলন করা এবং সন্ধ্যায় ৫-৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করা—এই ছিল তাঁর নিয়মিত রুটিন। এছাড়াও, যাত্রাপথে ভাল যোগাযোগের জন্য হিন্দি শিখেছিলেন এবং ইউটিউব ভিডিও দেখে প্রাথমিক ট্রেকিং কৌশলগুলির সাথে পরিচিত হয়েছিলেন।

দুঃসাহসিক যাত্রা: বাধাবিপত্তির সম্মুখীন

এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে পৌঁছানো মোটেই সহজ ছিল না। লুকলাগামী ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় নতুন পথ খুঁজতে বাধ্য হন একতা। নেপালে এক জার্মান দম্পতির সহায়তায় সুরকে হয়ে বিকল্প পথে যাত্রা শুরু করেন। পথে আরও অনেক ট্রেকারের সাথে পরিচয় হয়, যারা তাঁর যাত্রাকে অনুপ্রাণিত করে।

শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা

এই দীর্ঘ যাত্রাপথ ছিল বিপদসংকুল—খাড়া চড়াই, সরু পথ এবং গভীর গিরিখাত। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা হাঁটার পরেও ক্লান্তি তাঁকে দমাতে পারেনি। প্রতি কয়েক পা হাঁটার পর পাঁচবার গভীর শ্বাস নিয়ে ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতেন। লাঠি ব্যবহার করে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া ছিল তাঁর কৌশল।

অতীতে একাকি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

এটাই একতার প্রথম একক অভিযান নয়। গত বছর থাইল্যান্ডে একাই ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে মানসিকভাবে আরও দৃঢ় করে তুলেছিল।

প্রেরণার প্রতীক: নারীদের জন্য দৃষ্টান্ত

বসন্তী শাড়ি পরে বেস ক্যাম্পে ভারতের পতাকা ওড়ানো কেবলমাত্র একটি প্রতীক নয়; এটি নারীদের সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং ক্ষমতার প্রতিফলন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটি প্রমাণ করে যে, ইচ্ছাশক্তি এবং দৃঢ়তা থাকলে কোনো বাধাই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়।

অদম্য সাহসের উদাহরণ

একতার এই কৃতিত্ব কেবল তাঁর নয়; এটি সমস্ত নারীর জন্য একটি বার্তা যে প্রতিকূলতার মুখেও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাঁর দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প বহু মানুষের হৃদয়ে সাহস এবং প্রেরণা জাগিয়ে তুলেছে। সমাজের চোখে নারীদের ক্ষমতার একটি নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছেন বসন্তী।