গাজায় বিধ্বংসী হামলা ইসরায়েলের, দখল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, মৃত ৪৩৬ জন
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: গাজা উপত্যকা আবারও রক্তাক্ত। দুই মাসের সংঘর্ষবিরতি চুক্তি শেষ হতেই ইজরায়েলি সেনাবাহিনী পুরো দমে আক্রমণ শুরু করেছে গাজায়। বুধবার থেকে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক সেনা মোতায়েন করে ইজরায়েল, দখল করে নিয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দু’দিনে ইজরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৩৬ জন। নিহতদের মধ্যে ১৮৩ জন শিশু, যা পরিস্থিতিকে আরও হৃদয়বিদারক করে তুলেছে।
সংঘর্ষবিরতি শেষ হতেই ইসরায়েলের হামলা
যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবারই গাজার ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইজরায়েল। সেই হামলায় অন্তত ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। এর পরের দিনই স্থলপথে অভিযান শুরু করে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, মধ্য এবং দক্ষিণ গাজার বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। নেতজারিম করিডরের বড় অংশ দখল করেছে তারা, যা উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মধ্যে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। করিডরটি নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ফলে গাজার দুই প্রান্ত কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পণবন্দিদের মুক্তির দাবি
বুধবার সকালেই ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজার সাধারণ জনগণকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরামর্শ অনুযায়ী পণবন্দিদের মুক্তি এবং হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।’ এই সতর্কবার্তার পরই ইজরায়েলি সেনাবাহিনী স্থলপথে অভিযান শুরু করে।
সব বন্দিকে মুক্তি না দেওয়ার অভিযোগ
গত জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে হামাস এবং ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি হয়। চুক্তির শর্ত ছিল, বন্দি নাগরিকদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা। সেইমতো বেশ কিছু পণবন্দি মুক্তি দেওয়া হলেও ইজরায়েলের অভিযোগ, সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়নি এবং হামাস মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এই কারণেই সংঘর্ষবিরতির মেয়াদ শেষ হতেই আবারও বিধ্বংসী আক্রমণ শুরু করে ইজরায়েল।
মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইজরায়েলের এই আক্রমণে গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। হাসপাতালগুলোতে মৃতদেহের সারি লেগে আছে, আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিরতি পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছে।
আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়ছে
গাজার এই পরিস্থিতি বিশ্বমানবতার প্রতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। নিরীহ মানুষের মৃত্যু এবং শিশুদের প্রাণহানি শুধু গাজা নয়, সমগ্র বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। যুদ্ধবিরতির পথে ফিরে আসা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়ছে। তবে ইজরায়েল এবং হামাস—উভয়ের মনোভাবই আপাতত সংঘর্ষমুখী, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।