Friday, April 26, 2024
কলকাতা

বঞ্চিত SSC শিক্ষকদের মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

প্রবঞ্চিত ও প্রতারিত SSC শিক্ষকপদপ্রার্থীদের সংহতিতে সমাজের সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি।

প্রতি,
মুখ্যমন্ত্রী,
পশ্চিমবঙ্গ সরকার,
নবান্ন
হাওড়া

বিষয় : স্কুল সার্ভিস কমিশনের মেধা তালিকা অনুযায়ী নবম দশম একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকপদপ্রার্থীদের স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগের দাবি ।

মহাশয়া,

আমরা, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমাজসচেতন ও মানবিকতার প্রতি দায়বদ্ধ নাগরিকেরা পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন আয়োজিত 1st SLST(2016) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাতালিকাভুক্ত নবম থেকে দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের পক্ষ থেকে এই দাবিপত্র পেশ করছি।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়াতে নানাবিধ অস্বচ্ছতার কারণে অদ্যাবধি তিন দফার অন্দোলন হয়েছে । কী পরিমাণ দুর্নীতি বঞ্চনা প্রবঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হলে একটা প্যানেলের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর তিন দফার অন্দোলন হয় তা সহজেই প্রনিধাণযোগ্য ।

#প্রথম দফার আন্দোলন

স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির কারণে ২০১৯ সালে প্রেসক্লাবের সামনে ২৯ দিনের অনশন মঞ্চে আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে “মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীরা তাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না, প্রয়োজনে ওয়ান টাইম ল পরিবর্তন করে হলেও সবার চাকরি সুনিশ্চিত করা হবে ।”
সেখানে আপনি মেধাতালিকায় যোগ্যতা অর্জন করা শিক্ষক পদপ্রার্থীদের তরফে ৫জন আর শিক্ষা দপ্তরের ৫জন , মোট দশ জন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে শিক্ষা দপ্তরের সাথে ঐ পাঁচ জন শিক্ষক পদপ্রার্থীদের কমিটি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত কমিশনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনেক পশ্চাদবর্তী র‌্যাংক হওয়া সত্ত্বেও সেই ৫জন এবং তাদের ঘনিষ্ঠরা চাকরি পেয়ে যায়।

এখানে দেখা গেল যারা যোগ্য তারা বঞ্চিত থেকে গেল। তাছাড়া আপনার তৈরি কমিটিকে শিক্ষা দপ্তর ও স্কুল সার্ভিস কমিশন দুর্নীতি করে চাকরি দিয়ে দিল । শুধু তাই নয় লকডাউনের অন্ধকারে গেজেটকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেএস. এম. এস. -এর মাধ্যমেও গোপনে নিয়োগ করা হলো।

তারপর আজ আড়াই বছর কেটে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি, যারা যোগ্য তাঁরা বঞ্চিতই রয়ে গেছেন।

স্কুল সার্ভিস কমিশন বহুবিধ দুর্নীতির প্রমাণ রেখে চলেছে। তালিকার পিছন দিক থেকে, এমনকি পরীক্ষায় অকৃতকার্য বহু প্রার্থীকে স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ করে করছে। এর প্রভাবে ভবিষ্যত প্রজন্ম অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

#দ্বিতীয় দফার আন্দোলন

উপরিউক্ত অস্বচ্ছতার প্রতিবাদে পুনরায় সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের সামনে দীর্ঘ ১৮৭ দিন ধরে ধর্না-অবস্থান শুরু হয়, কিন্তু পুলিশ প্রশাসন
গত ৪ঠা আগষ্ট ২০২১-এ বৃষ্টি আর অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে রাতে ধর্ণামঞ্চ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।

এই শিক্ষকপদপ্রার্থীদের ৭০-৮০ টা দুর্নীতির প্রমাণ কমিশনের চেয়ারম্যান মহাশয়ের হতে তুলে দেওয়া হয, (RTI Copy হাতে আছে)। প্রতিনিয়ত দুর্নীতির আরো প্রমাণ এসে চলেছে। এই আন্দোলন আর দুর্নীতির প্রমাণ দেওয়ার ফলস্বরূপ গত১০.০৮.২০২১ তারিখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, তাঁরা এই আন্দোলনকে মান্যতা দিয়ে কিছু দিনের(৪০দিন) মধ্যে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেন। তার পর আরও দু’মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেল তবুও তাঁরা সুবিচার পেলেন না।

#তৃতীয় দফার আন্দোলন

নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ স্কুল সার্ভিস কমিশন স্বীকার করে নিলেও এখনো শিক্ষকপদপ্রার্থীরা ন্যায্য অধিকার পাননি। তাই আবারও তাঁরা আপনার প্রতিশ্রুতি পূরণের আশায় এবং তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঐতিহাসিক স্থান গান্ধী মূর্তির পাদদেশে গত ০৮.১০.২০২১ তারিখ থেকে তৃতীয় দফায় ধর্না-অবস্থান শুরু করেছেন। এই শীতের মধ্যেও সেই ধর্না অবস্থান জারি আছে ।

আন্দোলের মোট সময় ২৯+১৮৭+৫৮= ২৭৪ থেকে অনির্দিষ্টকাল । যতক্ষণ না শিক্ষকপদপ্রার্থীরা সুবিচার ও ন্যায্য অধিকার পান এই আন্দোলন চলবে।

গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে SSC আন্দোলনকারীরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে গিয়েছিলেন তাঁদের দাবি জানাতে। কিন্তু বিধান নগরের পুলিশের অমানবিক আচরণ করেছে। অনেকেই আক্রান্ত ও আহত হয়েছেন। এমনকি মেয়েদের উপরও অত্যাচার হয়েছে।

এর শেষ কোথায় !

আমাদের প্রশ্ন :

যেখানে পরীক্ষায় ফেল করা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হলো,

যেখানে পরীক্ষায় না বসা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হলো,

যেখানে তালিকায় না থাকা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হলো,

যেখানে মেধা তালিকায় পেছনে থাকা প্রার্থীকে মেধাতালিকায় উপরে থাকা প্রার্থীকে টপকে চাকরি দেওয়া হলো,

যেখানে এত আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে চাকরি দেওয়া হলো,

সেখানে যোগ্য অথচ বঞ্চিত শিক্ষক/শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের রাস্তায় নিজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ধর্না দিতে হচ্ছে, আমরা এর প্রতিকার চাই।

আপনার কাছে আমাদের দাবি, আর মিথ্যা আশ্বাস নয়, এবার এতদিন ধরে বঞ্চিত মেধাবী শিক্ষক পদপ্রার্থীদের স্বচ্ছ নিয়োগ চাই ।

আশা করি, আপনি শিক্ষকপদের যোগ্য দাবিদারদের এই দীর্ঘ সময়ব্যাপী আন্দোলনের দাবি মেনে এই খোলা চিঠির মানবিক উত্তরস্বরূপ তাঁদের স্বচ্ছ নিয়োগের উদ্যোগ নেবেন।

তারিখ : ১৬/১২/২০২১

 

স্বাক্ষর :

১.তরুণ মজুমদার (চিত্র পরিচালক)
২.পবিত্র সরকার(শিক্ষাবিদ)
৩.অম্বিকেশ মহাপাত্র(অধ্যাপক)
৪.চন্দন সেন(নাট্যকার)
৫.কৌশিক সেন (অভিনেতা)
৬.সব্যসাচী চক্রবর্তী (অভিনেতা)
৭.নন্দিনী মুখোপাধ্যায় (অধ্যাপক)
৮.মীরাতুন নাহার(শিক্ষাবিদ)
৯.রজত বন্দ্যোপাধ্যায়(নাট্যব্যক্তিত্ব)
১০.অরুণাভ গাঙ্গুলী(চিত্র পরিচালক)
১১.ফুয়াদ হালিম( চিকিৎসক)
১২.বিমল চক্রবর্তী (অভিনেতা)
১৩.কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়( চিত্র পরিচালক)
১৪.বাদশা মৈত্র(অভিনেতা)
১৫.সীমা মুখোপাধ্যায়(নাট্যকার)
১৬.অনীক দত্ত (চিত্র পরিচালক)
১৭.সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় (আইনজীবী)
১৮.স্বপ্নময় চক্রবর্তী(সাহিত্যিক)
১৯.পল্লব কীর্তনীয়া (গীতিকার ও গায়ক)
২০.চন্দন সেন(অভিনেতা)
২১.দেবদূত ঘোষ(অভিনেতা)
২২.কাজী কামাল নাসের (গীতিকার ও গায়ক)
২৩.মনীষা আদক(নাট্য ব্যক্তিত্ব)
২৪.শমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাচিক শিল্পী)
২৫.শুভ্রা ব্যানার্জ্জী ( সমাজকর্মী )
২৬.সৌরভ পালোধী (নাট্যব্যক্তিত্ব)
২৭.লীনা ঘোষ (শিক্ষিকা)
২৮.শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার (সঙ্গীত শিল্পী)
২৯.মন্দাক্রান্তা সেন (কবি)