Friday, April 26, 2024
সম্পাদকীয়

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম

বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারী আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর-
বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনের সময় এই বিদ্রোহী কবিতাটি শোনা যায় এক তরুণ কিশোরের কন্ঠে। নাম তাঁর কাজী নজরুল ইসলাম।
১১ জৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে, 24 মে 1899 খিস্টাব্দে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতার নাম জাহেদা খাতুন।বাল্যকালে তাঁর পিতা-মাতা তাঁকে ‘দুখু মিয়া’ বলে ডাকতেন। এই দুখু মিয়াই পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের শেষ্ঠ কবিদের একজন। তিনি বিদ্রোহ করেছিলেন সকল অন্যায়, অসভ্য, শোষণ-নির্যাতন আর দুঃখ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে।
দুঃখ, দারিদ্র্য এবং সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর জীবন। চরম আর্থিক অনটন আর দুঃখ দারিদ্র্যের মধ্যেই তাঁর বাল্যকাল কাটে। তিনি বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি। দশম শ্রেনির ছাত্র থাকাকালে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্কুল ছেড়ে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন। যুদ্ধ শেষ হলে 1919 খিস্টাব্দে বাঙালি পল্টন ভেঙে দেওয়া হয়। নজরুল কলকাতায় ফিরে এসে সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন।

এ সময় সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে চারদিকে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর কবিতায় পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উচ্চারিত হয়েছে। অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি প্রবল প্রতিবাদ করেন। এজন্যে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তাঁর রচনাবলি অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। কবিতা, সংগীত, উটন্যাস, প্রবন্ধ ও গল্প- সাহিত্যের সকল শাখায় আমরা তাঁর প্রতিভার উজ্জল পরিচয় পেয়ে থাকি। তিনি সাম্যবাদী চেতনা ভিত্তিক কবিতা, শ্যামাসংগীত, ইসলামি গান ও গজল লিখে প্রশংসা পেয়েছেন। তিনি আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহারে কুশলতা দেখিয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে; কাব্যগ্রন্থ- ‘অগ্নিবীনা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘সাম্যবাদী’, সর্বহারা, সিন্ধু-হিন্দোল, চক্রবাক; উপন্যাস- ‘মৃত্যুক্ষুধা’, কুহেলিকা;
গল্পগ্রন্থ- ব্যাথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা; প্রবন্ধগ্রন্থ- ‘যুগবাণী’, রুদ্র-মঙ্গল;
নাটক- ‘ঝিলিমিলি’, ‘আলেয়া’, মধুমালা, প্রভৃতি অন্যতম।

1942 সালে এক দুরারোগ্য মস্তিষ্কের রোগে নজরুল সম্পর্ণ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অনেক চিকিৎসার পরও তিনি আর সুস্থ হননি। 1972 সালের 24 মে কবিকে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে যায় বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন।
1976 সালের 29 আগস্ট ঢাকা পিজি হাসপাতালে নজরুলের মৃত্যু হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
আজ তাঁর 41তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।