‘রবীন্দ্র সরোবরকে বাঁচান’, আর্জি পরিবেশবিদদের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: কলকাতার এক গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র রবীন্দ্র সরোবর সংরক্ষণের দাবিতে ফের সরব হলেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়ে একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, রবীন্দ্র সরোবর শুধুমাত্র একটি জলাশয় নয়, এটি কলকাতার অন্যতম প্রধান জীববৈচিত্র্য কেন্দ্রও।
জীববৈচিত্র্যের অপরিসীম গুরুত্ব
পরিবেশবিদদের মতে, রবীন্দ্র সরোবর একটি ঐতিহ্যবাহী জীববৈচিত্র্য কেন্দ্র। এটি ‘জাতীয় হ্রদ’ হিসেবেও পরিচিত এবং কলকাতার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয়, যার বিস্তৃতি প্রায় ১৯২ একর। সরোবরটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর এক সমৃদ্ধ বাসস্থান, যেখানে ৩৬৬টিরও বেশি স্থলজ ভাস্কুলার উদ্ভিদ প্রজাতি এবং ১০৭ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি বসবাস করে। এটি নগর জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্বন সিঙ্ক, যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে।
সংকটের মুখে রবীন্দ্র সরোবর
তবে, এই গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র বর্তমানে দূষণ, ইউট্রোফিকেশন এবং অতিরিক্ত মানুষের চাপের কারণে সংকটের সম্মুখীন। জলাশয়টির সুরক্ষার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে পরিবেশবিদরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে আবেদন জানিয়ে আসছেন। তাঁদের মতে, এটি শুধুমাত্র কলকাতার সবুজ স্থান নয়, বরং জলজ ও স্থলজ বহু প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল।
‘ঐতিহ্য জীববৈচিত্র্য স্থান’ ঘোষণার দাবি
পরিবেশবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ মনে করেন, রবীন্দ্র সরোবরকে ‘ঐতিহ্য জীববৈচিত্র্য স্থান’ হিসাবে ঘোষণা করা হলে এটি সংরক্ষণে একটি বড় পদক্ষেপ হবে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য বোর্ডের জরিপে সরোবরটির পরিবেশগত গুরুত্ব স্বীকৃত হয়েছে। তবে, এখনো পর্যন্ত কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (KMDA) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এই সংরক্ষণ প্রস্তাব।
পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক উদ্যোগের আহ্বান
পরিবেশবিদরা দাবি তুলেছেন, প্রশাসন যেন অবিলম্বে সরোবরের সুরক্ষার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। রবীন্দ্র সরোবর শুধুমাত্র এক ঐতিহ্যবাহী হ্রদ নয়, এটি কলকাতার বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। একে রক্ষা করা না গেলে শহরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য গুরুতর হুমকির মুখে পড়বে। তাই প্রশাসনের দায়িত্ব এখন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহ্যবাহী হ্রদ সংরক্ষিত থাকে।