Saturday, July 27, 2024
সম্পাদকীয়

পাকিস্তান প্রেমী সকলের জানা উচিৎ…!

“মহাদেবের জটা থেকে নয়, বাংলা মায়ের নাড়ী ছিঁড়ে জন্ম নিয়েছিলেন যে সোনার মেয়ে সে ভাগীরথীকে ওরা জ্যান্ত জীপে বেঁধে শহরের রাস্তায় টেনে টেনে হত্যা করেছে। খান দস্যুরা হয়তো পরখ করতে চেয়েছিলো ওরা কতখানি নৃশংস হতে পারে। বলতে হয় এক্ষেত্রে ওরা শুধু সফল হয়নি, বর্বরতার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

অষ্টাদশী ভাগীরথী ছিল অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদমতলীর এক বিধবা পল্লীবালা। বিয়ের এক বছর পর একটি পুত্র সন্তান কোলে নিয়েই তাকে বরণ করে নিতে হয় সুকঠিন বৈধব্য। স্বামীর বিয়োগ ব্যাথা তখনও কাটেনি। এরই মধ্যে দেশে নেমে এল ইয়াহিয়ার ঝটিকা বাহিনী। মে মাসের এক বিকালে ওরা চড়াও হল ভাগীরথীদের গ্রামে। হত্যা করলো অনেক কে, যেখানে যেভাবে পেলো। এ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ভাগীরথীকে ওরা মারতে পারল না। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এলো পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হল হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।

সতী নারী ভাগীরথী। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যুকে তিনি একমাত্র পরিত্রাণের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এলো নতুন চিন্তা, হ্যাঁ মৃত্যুই যদি বরণ করতে হয় ওদেরই বা রেহাই দেব কেন? ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিলো এবার। এখন আর অবাধ্য মেয়ে নয়, দস্তুরমত খানদের খুশি করতে শুরু করলো, ওদের আস্থা অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগালো।

বেশি দিন লাগলো না অল্প কদিনেই নারীলোলুপ সেনারা ওর প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করলো। আর সেই সুযোগে ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করলো পাকবাহিনীর সব গোপন তথ্য। এক পর্যায়ে বিশ্বাসভাজন ভাগীরথীকে ওরা নিজের ঘরেও যেতে দিতো। আর কোনো বাধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে। এরই মধ্যে চতুরা ভাগীরথী তার মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর সাথে গড়ে তুললো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এরপরই এলো আসল সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রণ করলো তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তিবাহিনীকেও তৈরি রাখা হল যথারীতি। ৪৫ জন খানসেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাঘমারা কদমতলা এসেছিলো কিন্তু তার মধ্যে মাত্র কয়েকজনই ফিরতে পেরেছিলো।

এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায় নি। ওরা বুঝেছে এটা তারই কীর্তি। কীর্তিমানরা তাই হুকুম দিলো জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরুস্কার দেয়া হবে।

কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানতো না ওর জন্য আরও দুঃসহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। একদিন রাজাকারদের হাতে ধরা পরলো ভাগীরথী। তাকে নিয়ে এল পিরোজপুর সামরিক ক্যাম্পে। খান সেনাদের এবার ভাগীরথীর উপর হিংস্রতার পরীক্ষার আয়োজন করলো। এক হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাথায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার অঙ্গাবরণ খুলে ফেললো কয়েকজন খান সেনা। তারপর দু’গাছি দড়ি ওর দুপায়ে বেঁধে একটি জীপে বেঁধে জ্যান্ত শহরের রাস্তায় টেনে বেড়ালো ওরা মহাউৎসবে। ঘণ্টা খানিক রাজপথ পরিক্রমায় পর আবার যখন ফিরে এলো সেই চৌমাথায় তখনও ওর দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে।

এবার তারা দুটি পা দুটি জীপের সাথে বেঁধে নিল এবং জীপ দুটিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দু ভাগ হয়ে গেল। সেই দুভাগে দুই জীপে আবার শহর পরিক্রমা শেষ করে জল্লাদ খানরা আবার ফিরে এলো সেই চৌমাথায় এবং সেখানেই ফেলে রেখে গেল ওর বিকৃত মাংসগুলো। একদিন দুদিন করে মাংসগুলো ঐ রাস্তার মাটির সাথেই একাকার হয়ে গেল এক সময়। বাংলা মায়ের ভাগীরথী এমনি ভাবেই আবার মিশে গেলো বাংলার ধূলিকণার সাথে। কেবল ভাগীরথী নয়, আরো দু’ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ওরা এভাবেই হত্যা করেছে পিরোজপুর শহরে।“

সূত্র- দৈনিক আজাদ