Friday, May 10, 2024
রাজ্য​

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে কর্ণাটকে আটকে ছেলে-বৌমা, তাদের ফেরাতে ৮ মাসের লড়াইয়ে মৃত বৃদ্ধ বাবা

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামের বাসিন্দা পলাশ এবং শুক্লা অধিকারী। বাড়তি রোজগারের আশায় স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে নিয়ে ২০২২ সালের জুনে বেঙ্গালুরুতে পাড়ি দেন পলাশ। মারাথাহাল্লি মহকুমার ভারথুর থানার সুলিবেলা গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নেন তাঁরা। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ শুরু করেন পলাশ। হোটেল, রেস্তরাঁ, সিনেমা হল-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বর্জ্যবস্তু, বোতল, প্লাস্টিক জাতীয় সরঞ্জাম বাছাই করার কাজ করতেন পলাশ। কিন্তু গত ২৭ জুলাই সস্ত্রীক পলাশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশ দাবি করে তাঁরা বাংলাভাষী। তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী।

ছেলে-বৌমাকে ফেরাতে টানা ৮ মাস দৌড়াদৌড়ি করেন পলাশের বৃদ্ধ বাবা পঙ্কজ অধিকারী। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধের।

পরিবারের অভিযোগ, আইনি লড়াই করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ। মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে বেঙ্গালুরুতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

মঙ্গলবার বৃদ্ধের নিথর মৃতদেহ ফিরিছে বর্ধমানের জামালপুরে। কিন্তু ছেলে-পুত্রবধূ এবং নাতিকে এখনও বেঙ্গালুরুতে জেলে আটকে রয়েছেন। পঙ্কজবাবুর দুই মেয়ে সাথী এবং শম্পা বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।

জানা গেছে, পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী পুলিশকে তাদের আধার, প্যান, ভোটার কার্ড ইত্যাদি দেখিয়েছিলেন। পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা, মা এবং প্রতিবেশী সুনীল অধিকারীকে ছেড়ে দিলেও অদ্ভুত ভাবে তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে আটকে রাখে। ছেলে-পুত্রবধূ এবং নাতিকে বাড়ি ফেরাতে শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বৃদ্ধ পঙ্কজ। এই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকরাও এই ঘটনায় বিস্মিত। জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ‘‘ভারথুর থানার তিন জন পুলিশ আধিকারিক আমার দফতরে এসেছিলেন। পলাশ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক কিনা? তাঁদের ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড আসল কিনা? সেই সব বিষয়ে বেঙ্গালুরু পুলিশ আমার কাছে জানতে চায়। এছাড়া পলাশদের পারিবারিক পরিচিতি, কত দিন তাঁরা তেলে গ্রামে বসবাস করছেন? আমরা ওই দম্পতির ভারতের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ভারথুর থানায় মেইল করি। তার পর জামালপুরের দলিল রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি দফতরের অফিস, জৌগ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকি বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা শাসকের অফিসে গিয়েও ওই দম্পতির নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যাচাই করেন ওই আধিকারিকরা। কিন্তু তারপরেও তাঁদের আটকে রাখা আশ্চর্যের বিষয়।”

এদিকে, মঙ্গলবার এই ঘটনার কথা জানতে পেরে ওই দম্পতিকে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বিষয়টি নিয়ে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিভাবে তাঁদের ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ছবি: আনন্দবাজার