Thursday, December 12, 2024
আন্তর্জাতিক

‘মাসিক কুঁড়েঘরে’ দমবন্ধ হয়ে তরুণীর মৃত্যু

কাঠমুন্ডু: নেপালে ঋতুমতী নারীদের জন্য তৈরি জানালাবিহীন মেনস্ট্রুয়েশন হাট বা মাসিকের ঘরে দমবন্ধ হয়ে মারা গেছেন ২১ বছরের এক তরুণী। তাঁর নাম পার্বতী বোগাতি। নেপালের দোতি জেলায় এই ঘটনাটি ঘটে।

২১ বছর বয়সী ওই যুবতীকে মাসিক ঋতুস্রাবের সময় নিঃসঙ্গ এক ঘরে রাখা হয়েছিল। মাসিক ঋতুস্রাবের সময়টাতে সংসারে ও সমাজে নারীরা থাকেন নিষিদ্ধ। তাঁরা খাবার স্পর্শ করতে পারেন না। পুরুষের ছোঁয়া লাগতে পারে না তাদের। এক কথায় তাঁরা থাকেন সমাজ থেকে নিষিদ্ধ।

পার্বতীর শাশুড়ি লক্ষ্মী বোগাতি বউকে দেখতে গিয়ে তাঁর লাশ পান। লক্ষ্মী বলেন, এক দিন পরই তাঁর ঋতুস্রাব শেষ হবে, এ নিয়ে সে খুব খুশি ছিল। কিন্তু অভাগী চিরতরেই চোখ বন্ধ করলো।

পার্বতীর মৃত্যু সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা লাল বাহাদুর ধামি বলেন, আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, রাতের বেলা ঠান্ডা থেকে বাঁচতে সে ঘরের ভেতরে দরজা বন্ধ করে আগুন ধরায়। ঘরটিতে কোনো জানালাও নেই। এর ফলে ধোঁয়া বাইরে যেতে পারছিল না। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

নেপালে প্রাচীন ‘চৌপাদি’ প্রথা অনুযায়ী মাসিকের সময় বা সন্তান জন্মদানের পরপর নারীদের ‘অশুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময় নারীরা দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারেন বলে মনে করা হয়। তাই মাসিকের সময় নারীদের কুঁড়েঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়।

ওই সময়ে নারীদের পুরুষ ও গরু-ছাগল স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। দেবতার মূর্তি স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না। বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার ও কোনো কিছু ধোয়ার সুবিধা দেওয়া হয় না। দূরত্ব রেখে হাঁটাচলা করতে বলা হয়। কিশোরীরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রচণ্ড শীতেও মেয়েদের বাড়ির বাইরে রাখা হয়।

মাসিক ঋতুস্রাবের সময় বা প্রসূতি মাকে বাড়ির বাইরে পাঠানোর ওপর ২০০৫ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নেপাল সরকার। ২০১৭ সালে এটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো এই কুসংস্কার চালু রয়েছে। নেপালের আইন অনুসারে, কোনো নারীকে চৌপাদিতে বাধ্য করা হলে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ৩০ ডলার অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।