উত্তরপ্রদেশে ২২ জন পাকিস্তানি মহিলার ৯৫ জন সন্তান
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারত জুড়ে পাকিস্তান-বিরোধিতা বেড়েছে। একদিকে যেমন কড়া কূটনৈতিক বার্তা যাচ্ছে পাকিস্তানের দিকে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরেও নেওয়া হচ্ছে একের পর এক পদক্ষেপ। এর মধ্যেই নতুন করে সামনে এসেছে এক জটিল ও আইনি প্রশ্ন—ভারতে বসবাসকারী পাকিস্তানি মহিলাদের এবং তাদের ভারতীয় সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী?
উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ জেলায় অন্তত ২২ জন পাকিস্তানি মহিলার খোঁজ মিলেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে লং টাইম ভিসা নিয়ে বসবাস করছেন। এই মহিলারা অনেকেই ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন এবং ভারতে সংসার গড়ে তুলেছেন। তাঁদের গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানের সংখ্যা ৯৫ জনেরও বেশি, এবং এদের অনেকেই এখন প্রাপ্তবয়স্ক। সবমিলিয়ে তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫০০ জন।
ভারতীয় আইন অনুযায়ী, যদি কোনও শিশু ভারতের মাটিতে জন্মায় এবং তার পিতামাতা ভারতে বৈধভাবে বসবাস করেন, তাহলে সেই সন্তানের নাগরিকত্বের প্রশ্নে কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকে। সেই সূত্র ধরেই এই সন্তানেরা কার্যত ভারতীয় হিসেবে বড় হচ্ছে, ভারতের স্কুল-কলেজে পড়ছে, এমনকি অনেকের আধার কার্ড ও রেশন কার্ডও আছে।
তবে পহেলগাম হামলার পর তৈরি হওয়া রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত চাপের জেরে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে বিজেপি-শাসিত এলাকায় পাকিস্তানি নাগরিকদের তাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বাংলার বিভিন্ন জেলাতেও বিজেপির তরফে সোমবার বড় মিছিল দেখা গিয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে প্রশাসনের সামনে একটি মানবিক সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। বহু বছর ধরে ভারতে থাকা এই নারীরা কেবল একজন ‘বিদেশি’ নন, তারা এখন ভারতের সাংসারিক ও সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সন্তানদের ভারতীয় সমাজে রীতিমতো শিকড় গাঁথা। এমতাবস্থায়, তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো ন্যায়সংগত না মানবিক, তা নিয়ে দোদুল্যমান প্রশাসন।
মোরাদাবাদের পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “আমরা সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখছি। অনেকেই ১৫-২০ বছর ধরে ভারতে আছেন। তাদের উপর কোনও অপরাধমূলক অভিযোগ নেই। আমরা মানবিক দিকটাও খতিয়ে দেখছি।”
তবে জাতীয় স্তরে নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস করতে নারাজ কেন্দ্র। পহেলগাম হামলার পর যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা রাজনৈতিকভাবে স্পষ্টভাবেই কাজে লাগাতে চাইছে কিছু মহল। ফলে যারা বৈধ ভিসায় থেকেও সমাজের মূলস্রোতে মিশে গেছেন, তারাও এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এক পাক বধূর কথায়, “আমার ছেলে এইচএসসি দিয়েছে। আমি কীভাবে পাকিস্তানে ফিরে যাব? আমার নিজের ঘর এদেশে, মানুষ এদেশে, আমি কাকে ছেড়ে যাব?”