‘কোরান অনুযায়ী নারীরা পুরুষদের সমান অধিকার পেতে পারে না’, ১২ দফা দাবিতে ঢাকায় বিশাল জনসমাবেশ হেফাজতে ইসলামির
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশের কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বিশাল জনসমাবেশে তাদের ১২ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। এই সমাবেশে সংগঠনটির নেতারা একযোগভাবে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তাদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, ভারতের মুসলিমদের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা এবং নারীদের সমান অধিকারের বিরোধিতা করা।
প্রথমত, হেফাজত নেতারা ভারতের মুসলিমদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে তাদের জন্য আন্দোলন শুরু করার কথাও ঘোষণা করেন। তাদের মতে, ভারতীয় মুসলিমরা এখন ‘বিপদগ্রস্ত’ এবং সেসব মুসলিমের অধিকার রক্ষায় তারা যে কোনো ধরনের তৎপরতা চালাবেন। এছাড়া, চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর জামিন বাতিলের দাবিও জানায় সংগঠনটি, যা ধর্মীয় প্রতীকবাদের অবমাননা হিসেবে তারা গণ্য করে।
হেফাজতের ১২ দফা দাবি:
১. নারী ও পুরুষদের সমান অধিকার দেওয়ার বিরোধিতা,
২. আল্লাহ এবং নবী সম্পর্কে কটূক্তি করলে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি,
৩. গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন থেকে ধর্ম অবমাননার শাস্তি সংক্রান্ত ধারাগুলি বাতিল করার দাবি,
৪. আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবি,
৫. নারী কমিশনকে কার্যকর না হওয়ার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি।
সমাবেশে বক্তারা শুধু ধর্মীয় ব্যাপারেই নিজেদের মত প্রকাশ করেননি, বরং নারীদের সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রের ভূমিকা নিয়ে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এক বক্তা দাবি করেন, “নারীরা অফিসে কেন যাবে?” আরেক বক্তার মতে, “কোরআন অনুযায়ী, নারী ও পুরুষ সমান অধিকার পেতে পারে না।”
হেফাজতের এই বক্তব্যে দেশের নারী আন্দোলনকারীরা তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন, এই ধরনের মন্তব্য নারীদের সামাজিক অধিকার এবং উন্নতির পথকে সংকুচিত করে। সংগঠনের নেতারা বলেন, “বাংলাদেশে পশ্চিমের সংস্কৃতি আমদানি করা যাবে না” এবং কোরআন অনুযায়ী সমাজব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়।
এদিকে, হেফাজতের নেতারা দেশীয় রাজনীতি এবং কূটনীতি নিয়েও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তারা দাবি করেন, “গাজা ও ভারতে মুসলিমদের ওপর চলমান অত্যাচার নিয়ে কূটনৈতিকভাবে আরও তৎপর হতে হবে।” তাদের মতে, মুসলিমদের এই সংকটের বিরুদ্ধে পুরো মুসলিম বিশ্বকে একত্রিত হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেফাজতে ইসলামের এই সমাবেশ বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। নারী অধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি বাংলাদেশে এক বড় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এমন একটি সমাবেশ দেশের উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।