Sunday, May 19, 2024
আন্তর্জাতিকসম্পাদকীয়

সহিংসতার শিকার হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা

নিজস্ব প্রতিবেদন: ——————————————————————–

সংগ্রাম দত্ত:

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি, বাড়ি, মন্দিরে জমির দখলের প্রয়াস ও বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি ভাঙচুরের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আতঙ্কিত।

সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি দখল এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে, নির্যাতন চালিয়ে উচ্ছেদের ঘটনা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিককালে টাঙ্গাইল ,ফরিদপুর, হবিগঞ্জ , কুড়িগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পলাশী মোড়ে জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের সময় অশুভ শক্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করতে পারে।

এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিএনপির এক সমাবেশে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও একই রকম আশঙ্কা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সম্পাদক গোবিন্দ চন্দ্র প্রমাণিকের ফেসবুক পেইজে গোপালগঞ্জ জেলার চরপাড়া গ্রামের মন্দিরের দুর্গামূর্তি ভেঙ্গে ফেলার পোস্ট দিয়েছেন। এতে জানা যায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর কতিপয় দুর্বৃত্ত মন্দিরের কিছু মূর্তি ভাঙচুর করে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোর ২৫ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে, ঢাকার রাস্তায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ার সময় আহত মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল (৫২) হাসপাতালে এক সপ্তাহ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জাব লড়ে শেষ পর্যন্ত গত ২৫ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিজি প্রেসের সামনের রাস্তায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ ওরফে মামুনের প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে একদল সন্ত্রাসী। এ সময় মোটরসাইকেলে করে ওই পথ দিয়ে নিজ বাসায় ফেরার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ভুবন।

যমুনা টেলিভিশন এর এক রিপোর্টে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টম্বর সন্ধ্যায় দিনাজপুর জেলা শহরের কালুরমোড় এলাকায় জনসম্মুখে এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীর নাম জয়া বর্মন। তিনি দিনাজপুর বাস টার্মিনাল এলাকার সৌদিয়া হোটেলে কাজ করতেন। স্বামীর স্বপন রায়ের সঙ্গে শহরের ফকিরপাড়া খানকা এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রকাশ্যে এক ব্যক্তি ওই নারীকে কোপাচ্ছেন। এসময় তার হাতের কব্জি কেটে যায়। পরে একজন তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দৈনিক কালের কন্ঠ এক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদপুরে হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কূল গ্রামে উত্তম বর্মন ও তার স্ত্রী কাজলী রানী বর্মন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
বাড়ি দখল ছিল উদ্দেশ্য, চিনে ফেলায় স্বামী-স্ত্রী খুন হন।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ১৬ দিন পর জোড়া খুনের ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরমধ্যে ২ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।

পুলিশ জানায়, মূলত ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়াই ছিল ঘাতকদের উদ্দেশ্য। কিন্তু চিনে ফেলার কারণে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় উত্তম বর্মন ও তার স্ত্রী কাজলী রানী বর্মনকে।

চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়। এসময় তিনি জানান, ঘাতকদের উদ্দেশ্য ছিল এই দুজনকে সরিয়ে দিয়ে বাড়িটি তাদের দখলে নেওয়া। কিন্তু রাতের আধারে চিনে ফেলার কারণে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এসময় বসতঘর থেকে কিছু মালামালও নিয়ে যায় তারা। এই ঘটনায় নিহতদের মেয়ে বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ২ জনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে সোহাগ মুন্সি ও মিজান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

দৈনিক ভোরের কাগজ এক প্রতিবেদনে গত ৬ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এক হিন্দু পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি জবর দখল করে চাষাবাদ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় ভুক্তভোগীর বাড়ি-ঘরে হামলা ও তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয় বলে জানা যায়।
উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা খোকন মণ্ডলের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় তিনি ৯৯৯ এ কল করেও পুলিশের সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেন।

দৈনিক খবরের আলো ১ আগষ্ট তারিখে মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি এম আর কে লিটন এর এক রিপোর্টে জানা যায় যেমানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় রাতের আধারে গণেশ রাজবংশীর বসতভিটা সহ মন্দির দখল করার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার হালিম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় হালিম ও তার পরিবার ওই জমিতে বসবাস স্হাপন করতে দেখা যায় ।

দৈনিক যায়যায়দিন ৬ আগস্ট পত্রিকায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মোঃ ইউসুফ আলী এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন যে, ধনাঢ্য ব্যক্তি মোহাম্মদ মখন মিয়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তরসুর মৌজাতে বিসিক শিল্প নগরীর পাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ট্রাস্টের নিকট দানকৃত দেবোত্তর সম্পত্তির প্রায় ৩ একর ভূমি জবর দখল করে ফসল চাষাবাদ করছেন। শহরের সেন্ট্রাল রোডে এনিমি সম্পত্তি( মাড়োয়ারীদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি) দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করছেন।

আরটিভি ( RTV) গত ২৯ আগষ্ট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের ‘আলোয়াখোয়া ঠাকুর’ হিন্দু মন্দির এবং মন্দিরের মালিকানাধীন দেবোত্তর সম্পত্তি অবৈধ দখলের অভিযোগের ঘটনায় রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
গত ২৯ আগস্ট রুল জারির বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। গত ২৮ আগস্ট বিচারপতি কে এম কামরুল ও বিচারপতি শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, নীলফামারী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে গত ১৭ ও ১৮ মার্চ সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেলের অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজার সাধারণ মানুষের জমি, হিন্দু মন্দির এবং উক্ত মন্দিরের মালিকানাধীন দেবোত্তর সম্পত্তি জোর করে দখলের মাধ্যমে মেজর রানার মালিকানাধীন চা-বাগান অর্গানিক অরিজিন ফার্মস লিমিটেড (রানা চা বাগান) গড়ে তোলার বিষয়টি উঠে আসে।

দৈনিক কালের কন্ঠ ৩০ আগস্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে,হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক হিন্দু পরিবারের জমি অবৈধ দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জমি রক্ষা ও নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে। অভিযোগ অনুযায়ী, উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের বেজুড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আনন্দ মোহন রায়ের ছেলে অমরেন্দ্র রায় পৈতৃক সূত্রে পাওয়া গ্রামের ১১৩ শতাংশ জমি ৫০ বছর ধরে ভোগ করে আসছেন। গত ২২ জুলাই সকালে একই গ্রামের মৃত আশু মিয়ার ছেলে শাহেদুর, মোখলেছ মিয়া, তাঁদের চাচাতো ভাই হাবিবুর, মিজান মিয়াসহ কয়েকজন লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই জমি জোর করে দখল করে তাতে হালচাষ শুরু করেন।

দৈনিক কালবেলা ১৭ জুলাই এক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে,পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের রানী রাসমনির প্রতিষ্ঠিত রানীগঞ্জ পাটেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরের জমি অবৈধভাবে দখল করে মাটি ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে।
রানীগঞ্জ বাজার সমিতি ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়াও মন্দিরের আশ্রিত জমিতে বসবাসকারী পাঁচ সংখ্যালঘু পরিবারকে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ও মন্দির কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসন বাজার কমিটির মাধ্যমে মন্দিরের জমি সুকৌশলে দখল করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাজার সমিতি ও উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসন মন্দিরের অনুকূলে বরাদ্দ থাকা ৫ একর ৯২ শতক জমি ১৯৭৫ সালে বাৎসরিক ১৭ হাজার ৬৯০ টাকা কর নির্ধারণ করে। সে হিসেবেই মন্দির কর্তৃপক্ষ ওই জমি ব্যবহার করে আসছিল।
তবে হঠাৎ করে ২০২২ সাল থেকে ঐতিহাসিক এ মন্দিরের ৯২ শতক কৃষি জমি দখল করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের চেষ্টা করে আটোয়ারী উপজেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে মন্দিরের নামীয় জমি ৫ একর ৯২ শতক খাস খতিয়ানভুক্ত বলে মন্দির কর্তৃপক্ষকে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।
এতে পুনরায় মন্দিরের জমিতে স্থাপনা নির্মাণে আপত্তি ও মন্দিরের নামে বন্দোবস্তের জন্য আবেদন জানায় মন্দির কর্তৃৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনে কোনো প্রতিকার না পেয়ে ২০২২ সালের জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে মন্দির কমিটি।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত একই বছরের ১লা নভেম্বর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
তবে হঠাৎ ওই জমিতে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ৪৬ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে এবং দোকানপাট নির্মাণের চেষ্টা করছে। প্রতিকার পেতে মন্দিরের লোকজন জমি ফিরে পেতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থানসহ এই শ্রেণির জমি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনামলে দক্ষিণেশ্বর দেবোত্তর এস্টেটের রানী রাসমনি তার রাজ্যের গরিব হিন্দুদের ধর্মচর্চার জন্য কালীমন্দিরসহ কয়েকটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওই এলাকার হিন্দু ধর্মালম্বীরা বংশ পরাম্পরায় কয়েকশ বছর ধরে সেখানে পূজা পালন করে আসছেন।

দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকা ৫ জুলাই এক রিপোর্ট প্রকাশ করে যে, জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় হিন্দু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফের বিরুদ্ধে।
মো.আরিফুল ইসলাম আরিফ উপজেলার কিংজাল্লা এলাকার ইব্রাহিম সরকারের ছেলে। তিনি বর্তমান কমিটির উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি লতিফ সরকার। চাচার মদদেই আরিফ পুরো উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ ২০১৬ সালের মে মাসে ইসলামপুর শহরের রেলগেট এলাকায় দিলিপ নামের এক হিন্দু পরিবারের দেড় শতাংশ জমি জোর পূর্ব দখল করে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে দিলিপ বলেন, আরিফ তার লোকজন নিয়ে হঠাৎ করে আমার প্রায় দেড় শতাংশ জমি দখল করে নেয়। জমিটার মধ্যে দোকান ছিল। সেই দোকান একজনকে দিয়ে সে এখন ভাড়া তোলে। আরিফের ক্ষমতার জোরে আমাকে আইনগত ব্যবস্থাও নিতে দেয়নি। এখন আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি।

“দৈনিক আজকের পত্রিকা” ১৮ জন তারিখে এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মেখল পুণ্ডরীক ধামের জায়গা দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন ও তাঁর ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে।
গত ১৮ জুন সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী জানান, দলবল নিয়ে মন্দিরের রাস্তার ওপর দেয়াল নির্মাণের চেষ্টা করেন তাঁরা। এতে মন্দির কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে বিএনপির এই নেতার পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী আরও বলেন, ‘পুণ্ডরীক ধামের মানুষের সঙ্গে এলাকার অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকজনের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তাঁর ছেলে মন্দিরের জায়গা দখল করে সেবায়েতদের চলাচলের পথ রুদ্ধ করার মাধ্যমে এলাকায় অরাজকতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছে। পাশাপাশি সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছে। হিন্দু তীর্থক্ষেত্র পুণ্ডরীক ধামের জায়গা-জমির ওপর কেন বিএনপি নেতাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
এ সময় ইসকনের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। পুণ্ডরীক ধামের জায়গা দখলের চেষ্টা করা হলে কিংবা কোনো রকম ষড়যন্ত্র করা হলে সারা দেশের হিন্দুরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
পরে ইসকন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, এই পবিত্র ভূমিতে শ্রী পুণ্ডরীক বিদ্যানিধির জন্মস্থান। বিগ্রহের তদানীন্তন সেবায়েত ছিলেন হর কুমার স্মৃতিতীর্থ। তাঁর নাম আরএস খতিয়ানে লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের পক্ষে সেবায়েত হিসেবে লিপি আছে (যা চিরস্থায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে)। ওই বিগ্রহ অ্যাস্টেট জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুণ্ডরীক ধাম নামে পরিচিত। হর কুমার স্মৃতিতীর্থ আমৃত্যু ওই বিগ্রহের সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করেন। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য অবদান চৈতন্য ভাগবত, চৈতন্য চরিতামৃত, চৈতন্যমঙ্গল, গৌর-পার্ষদ চরিতাবলি গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান প্রামাণিক গ্রন্থে এই স্থানের মহিমা বর্ণিত হয়েছে।
চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী আরও বলেন, বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তাঁর ছেলে মীর হেলাল ভুয়া দলিল বানিয়ে মন্দিরের জায়গা দখল করছেন। মন্দিরের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি, যা কখনো হস্তান্তর যোগ্য নয়। আরএস খতিয়ানেও এ সম্পত্তি লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের নামে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিএস খতিয়ানে তার ধারাবাহিকতা না থাকার সুযোগে তাঁরা নিজেদের নামে জাল দলিল তৈরি করে এ সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছেন।

এফএনএস এর প্রতিনিধি সাইদ হোসেন সাজু গত ২২ জুন এক রিপোর্টে উল্লেখ করেন যে,রাজশাহী জেলার তানোরে অসহায় এক হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি দখলে নিতে নারী পুরুষের সমন্নয়ে গঠিত লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে দফায় দফায় হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছেন ভূমিদস্য নামে পরিচিত মাহফুজ মোল্লা। মাহফুজ মোল্লা তানোর পৌর এলাকার ধানতৈড় গ্রামের জালাল উদ্দীনের পুত্র।

দৈনিক সংবাদ -এর ২ জুন ২০২৩ তারিখে এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে ঝালকাঠি জেলার
কাঠালিয়ায় অর্ধশত বছরের পুরাতন একটি মন্দিরের জমির মালিকানা দাবি করে পথ আটকে দোকানঘর নির্মাণ ও মন্দিরের মাঠের একাংশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ জুন সকালে সাংবাদিকদের জানান মন্দির কমিটি ।
সংবাদ- এর প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে গত ২৭ মে শনিবার মধ্যেরাতে উপজেলায় আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমছিটকি এলাকায় শ্রী শ্রী সর্বজনীন বারোয়ারি কালি মন্দিরের প্রবেশ পথের গেট ভেঙে একটি দোকান ও মাঠের একাংশ দখল করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দখল করে নিয়েছে স্থানীয় রেজাউল কবির শাওন ওরফে শাওন দর্জি,আজাদ ফকির, শাহিন দর্জি, জাহিদুল ইসলামসহ তাদের পক্ষের লোকজন। এদের মধ্যে রেজাউল কবির শাওন ওরফে শাওন দর্জি বাংলাদেশ সেনাবাহীনির সৈনিক পদে নিযুক্ত রয়েছেন। এদিকে মন্দির দখলের ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
মন্দির কমিটি ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, যে প্রক্রিয়ায় একটি পক্ষ মন্দিরের সামনের ও পাশ্ববর্তী জমির মালিকানা দাবি করছেন সেটি অবৈধ। আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষরা দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত এখানে পূজা পালন করে আসছি। প্রতি বছর এখানে কালি, শিতলা, রক্ষাচন্ডী, মনষা, শিব, হরি, শনি দেবতার পূজা উদ্যাপিত হয়। এতে বিভিন্ন এলাকার প্রায় কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
মন্দির কমিটির সভাপতি গৌতম চন্দ্র হালদার বলেন, আমাদের মন্দিরের পথ আটকে ফেলায় ২ দিন ধরে আমাদের মন্দিরে পূজা আর্চনা বন্ধ রয়েছে। আমরাও হুমকির মধ্যে রয়েছি, সবাই সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যারা জমি দখল করে রাখছে তারা বলছে যে, এটা তারা ক্রয় করেছে। কিন্তু মন্দিরের সম্পত্তি ক্রয় করা যায় না। এটাই আমরা জানি। আমরা সরকারের মাধ্যমে এর সমাধান চাই। আমরা চাই, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মন্দিরের সম্পত্তি উদ্ধার করে আমাদেরকে সুন্দরভাবে পূজা করার পরিবেশ তৈরি করে দিক। এদিকে অভিযুক্তদের দাবি, মন্দিরের সামনে ও পথের জমি তাদের নিজস্ব ক্রয়কৃত সম্পত্তি।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সাবেক চেয়ারম্যান, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রাসেন্দ্র দত্তের মূল্যবান জমি দখলের ষড়যন্ত্র করছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।

জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রাসেন্দ্র দত্তের অনুমতি না নিয়ে তাঁর জমি থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মালেকা বেগমের স্বামী মোঃ নানু মিয়া কিছু শ্রমিক লাগিয়ে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেয়।
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় ওই ব্যক্তি জমির মালিকের কোনো অনুমতি ছাড়াই জোরপূর্বক মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করে।

খবর পেয়ে সাবেক চেয়ারম্যান রাসেন্দ্র দত্তের বড় ছেলে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এসে ঘটনাটি দেখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তিনি স্থানীয় মেম্বার মোহাম্মদ শাজাহান মিয়াকে মাটি কাটা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। রাস্তা গত ৪ মে বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ইতিপূর্বে মো. মইনূল , শিপন ও অন্যান্য প্রতিবেশীরা মিঃ দত্তের বিস্তীর্ণ জমি থেকে মাটি কেটে পুকুরের মতো অনেক গর্ত ও ডোবা তৈরি করেছেন।
মো. মইনুল গর্ত ও ডোবা মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়ার শর্তে মুচলেকা দিলেও সেই আশ্বাস আজো পূরণ করেননি।

অন্যদিকে মোঃ আনকার ও মোঃ হান্নান দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বক ১৫ শতক জমি দখল করে রেখেছে। কিন্তু তাদের কাছে আরএস রেকর্ড ও এসএ রেকর্ডের মতো কোনো সঠিক নথি নেই। এমনকি জমির খাজনাও জমির প্রকৃত মালিকরা পরিশোধ করছেন।

ইতিপূর্বে ২০০৫ সালে একই এলাকার হারুন, জয়নাল ও তোয়াহিদ মিলে চেয়ারম্যান রাসেন্দ্র দত্তের বড় ভ্রাতা রবীন্দ্র দত্তের কাছ থেকে ছয়টি রেভিনিউ স্ট্যাম্পের উপরে মারধর করে জুরপূর্বক ভাবে স্বাক্ষর নিয়ে যায় এবং সম্পত্তি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় থানায় মামলা দেওয়া হলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে । এ দিকে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ আহাদ মিয়া সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার পাওয়ার পক্ষে ভূমিকা রাখেন।
এদিকে মনিন্দ্রচন্দ্র বর্মন মৌলভীবাজার কোর্টে মামলায় হেরে হাইকোর্টের ডিভিশনে নেয়ার পর মামলা থাকা অবস্থায় রাসেন্দ্র দত্ত চেয়ারম্যানের ৩০ ভূমি মোহাম্মদ শফিক মিয়া লন্ডনী নামের এক ধনাঢ্য ব্যক্তির নিকট কাছে বিক্রি করে দেন। পরের শফিক মিয়া মারা যাওয়ার পর নোমানী নামের যে ব্যক্তিকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ঐ মামলাকৃত জমি অন্যান্যদের কাছে বিক্রি করে দেন। ওই জমি নিয়ে এখনো হাইকোর্টে মামলা চলছে।

স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় এ কাজটি সংগঠিত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্দেশ্য হলো বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও হয়রানির মাধ্যমে জমির মূল্য কমিয়ে দেওয়া যাতে রাসেন্দ্র বাবু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাদের মূল্যবান জমিজমা পানির দামে বিক্রি করে অথবা ফেলে দিয়ে অন্যত্র চলে যান।
উল্লেখ্য যে, এভাবে ওই সন্ত্রাসী চক্রটি মালুপাড়া, ডুলিপাড়া, নমশূদ্রপাড়ার অনেককে বাস্তূভিটা থেকে উচ্ছেদ করে পানির দামে তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেছে বলে জানা গেছে।

বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, গত ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর রাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলার জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

দৈনিক জনকণ্ঠের ১০ জানুয়ারি এক সংবাদ প্রকাশে উল্লেখ করে যে, চাঁদপুরের জেলার কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক মো. ইব্রাহীম মিয়ার (দুরন্ত ইব্রাহীম) বিরুদ্ধে উপজেলার বাসাবাড়িয়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি জোর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইব্রাহীম তার মা ও বোন প্রভাব বিস্তার করে ওই জমি দখল করেছে বলে ভুক্তভোগী উত্তম সরকার কচুয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

গত বছর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল শহরের প্রীতম দাস নামক এক রাজনৈতিক নেতাকে বানোয়াট ধর্মীয় গুজব রটানোর অভিযোগে একটি প্রভাবশালী মহল স্বীয় স্বার্থ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জেলো প্রেরণ করে। পরে তাঁর দল জামিনের আবেদন করলে তিনি মুক্তি পান। তিনি বলেন ক্ষমতাশীল দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করে বানোয়াট অভিযোগ তুলে তাঁকে যেতে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনা নিয়ে দেশের জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

জাতীয় ট্যাবলেট নিউজ পেপার দৈনিক মানবজমিন এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, গত ৬ জানুয়ারি রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও সংগঠনটির কর্মীদের দেয়া তথ্য অনুসারে তৈরি করা হয়েছে বলে জানান এই জোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।

দেশে গত এক বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জন নিহত হয়েছে। ৩৯ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২৭ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮৯৯০ একর জমি দখল করা হয়েছে। বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭২টি পরিবারকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৪৪৫টি পরিবারকে। গত বছর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মোট ২২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, গত এক বছরে দেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জন নিহত হয়েছে। হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে ৮৪৯ জনকে, হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ৪২৪ জনকে এবং জখম ও আহত করা হয়েছে ৩৬০ জনকে। নিখোঁজ রয়েছেন ৬২ জন। চাঁদাবাজি হয়েছে ২৭ কোটি ৪৬ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা।

মোট ক্ষতি হয়েছে ২২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময় পরিবার ও মন্দির লুট হয়েছে ৩১৯টি। বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৮৯১টি, অগ্নিসংযোগ হয়েছে ৫১৯টি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে ১৭৩টি। ঘরবাড়ি দখল হয়েছে ৫৭টি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ৫০টি এবং মন্দিরের ভূমি দখল হয়েছে ৫১টি। দখলের তৎপরতা ৯৮৪ একর ১২ শতাংশ। বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭২টি পরিবারকে। উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৪টি পরিবারকে এবং উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হয়েছে ৩৫ হাজার ৮১৮টি পরিবারকে।

দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৪৪৫টি পরিবারকে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশত্যাগে হুমকির শিকার ১৫ হাজার ১১৫টি পরিবার এবং নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবার। সংঘবদ্ধ হামলা ৯৫৩টি। মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১২৮টি, প্রতিমা ভাঙচুর ৪৮১টি, প্রতিমা চুরি ৭২টি। অপহরণ করা হয়েছে ১২৭ জনকে এবং অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৭ জনকে। ৩৯ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭ জন। ধর্ষণের পর ১৪ জন হত্যার শিকার হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, ৫৫ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৫২ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা করা হয়েছে ৪০ জনকে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ভিন্নমত দমন ও সহনশীলতা চর্চার অভাবে দেশে অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১২৭টি। মিথ্যা মামলায় আসামি গ্রেপ্তার, বরখাস্ত, চাকরিচ্যুত করা এবং জেল-জরিমানার শিকার হয়েছেন ৭৯১ জন। ১ হাজার ৬৫৭টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অপবিত্রকরণের ঘটনা ঘটেছে ১৭৯টি এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়ার ঘটনা ১২৯টি।

মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করেনি।

এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিরোধকল্পে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং একটি উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবি জানানো হয়।

ছাড়া ইতিপূর্বে ২০১৫ সালে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এর নেতৃবৃন্দ এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন যে, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলের চেষ্টা,

স্বরূপকাঠিতে এক ব্যবসায়ীর দোকান দখলের অপপ্রয়াস চালানোর অভিযোগ, গাইবান্ধার রামগঞ্জ মিশন ও আশ্রমের জমি দখল এবং গাছ কাটার অভিযোগ, ফরিদপুরের ভাজনডাঙ্গার জমিদার সতীশ চন্দ্র গুহ মজুমদারের বাড়ি দখলে নিয়ে পুরোনো ভবন গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ, লক্ষ্মীপুরের দালালবাজারে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসীরা জমিদারবাড়ির ৩৬ একর দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা ইত্যাদি ঘটনায় তৎকালীন কিছু এমপি, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী মহল জড়িত বলে তারা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।

নাটোরের সিংড়ায় মুক্তিযোদ্ধা ননীগোপাল কুণ্ডু ও তাঁর স্ত্রী চিত্রা রানীকে খুন করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে কলেজছাত্রী শিল্পী রানীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
কক্সবাজারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাস চালিয়ে তাদের জায়গা দখল করেছে জাবেদ কায়সারের সন্ত্রাসী বাহিনী।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দখল ও নির্যাতনের উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন ভালো নেই। আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতিও ভালো নয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সভাপতি সাংসদ উষাতন তালুকদার, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।