রাস্তায় ঠেলায় ছোলা-কুলচা বিক্রি করে কোটিপতি এই নারী
গুরগাঁও: প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট বলেছিলেন, ‘নারীরা অনেকটা টি-ব্যাগের মতো… আপনি জানতে পারবেন তিনি কতটা শক্তিশালী যতক্ষণ না তাঁকে গরম জলে ফেলা হচ্ছে।’ সেই কথাটাই প্রমাণ করে দেখালেন গুরগাঁওয়ের বাসিন্দা ঊর্বশী যাদব। অসুস্থ স্বামী এবং দুই সন্তানের পরিবার চালাতে ঠেলায় ছোলা-কুলচা বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। সেই তিনিই এখন তিন কোটি টাকার বাড়ির গ্যারেজে তাঁর চড়ার জন্য অপেক্ষা করে কোটি টাকার এসইউভি গাড়ি।
কিভাবে সম্ভব হলো এটা? অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রম করলে সাফল্য এক সময় ধরা দেবেই। উর্বশীর এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে পরিশ্রমের গল্প। ‘ঊর্বশী’জ ছোলা-কুলচা’ রেস্তোরাঁ গুরুগ্রামের বেশ পরিচিত একটি নাম। এই দোকানেরই মালিকের ঊর্বশী যাদব। একসময় গুরগাঁওয়ের সেক্টর ১৪-তে গুলাব রেস্তোরাঁর ঠিক বিপরীতে একটি ঠেলায় ছোলে-কুলচা বিক্রি করতেন তিনি। আর এখন একটি রেস্তোরাঁর মালিক।
ঊর্বশী প্রাক্তন সেনাকর্মীর পুত্রবধূ এবং একদা বড় চাকরিজীবী অমিত যাদবের স্ত্রী। পরিস্থিতি ঊর্বশীকে এই ব্যবসায় টেনে এনেছিল। সম্ভ্রান্ত পাঞ্জাবি পরিবারের মেয়ে। স্নাতক শেষ করে দিল্লিতে একটি নামী রেস্তোরাঁয় অফিস নির্বাহীর কাজ নেন। ২০১০ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সদস্যের ছেলে অমিত যাদবের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। অমিত একটি নামী রিয়েল এস্টেট সংস্থার ম্যানেজার ছিলেন।
২০১০ সালেই ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অমিতের একটি দুর্ঘটনা ঘটে। ঊর্বশী ফের সিদ্ধান্ত নেন কাজ শুরু করার। স্কুলশিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৩ সালে একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। সব কিছুই এ পর্যন্ত ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হন অমিত। বাধ্য হয়ে কাজ ছেড়ে দেয় সে।
দুই সন্তানদের পড়াশোনা, সংসার চালানো- সব কিছুই তখন ঊর্বশীর ঘাড়ে এসে পড়ে। সন্তানদের পড়াশোনা, সংসার চালানোর জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেন তিনি। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কোনও রেস্তোরাঁ বা বিউটি পার্লার খোলার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। কিন্তু অত পুঁজি পাবেন কোথায়?
একদিন ঊর্বশী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই তার চোখে পড়ে রাস্তার ধারে ঠেলাগাড়িতে এক ব্যক্তি ছোলা-কুলচা বিক্রি করছেন। তার সঙ্গে কথা বলে এই ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেন ঊর্বশী। ঠিক করেন, ঠেলায় করে ছোলা-কুলচা বিক্রি করবেন তিনি। প্রথমে অবশ্য আত্মীয়স্বজনরা নিরুৎসাহিত করেন তাকে। উর্বশীর নিজেরও সন্দেহ ছিল শেষ পর্যন্ত সফল হবেন কিনা।
উর্বশীকে সাহায্য করেন এক সাংবাদিক-ব্লগার সোনালি। গোটা ঘটনাটি নিজের ফেসবুক পেজে লেখেন তিনি। প্রচুর গ্রাহক আসতে শুরু করে। তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি উর্বশীকে। দিনে আড়াই-তিন হাজার টাকা উপার্জন করতেন। সকাল সাড়ে ৮টায় দোকান শুরু করতেন। বন্ধ করতেন বিকাল সাড়ে ৪টায়। এভাবেই কোটিপতি হয়ে যান ঊর্বশী যাদব।