“মা…ফিরব কি না জানি না”, মাওবাদী হামলার মুহূর্তে সংবাদকর্মীর ভিডিও বার্তা
রায়পুর: পেশাগত কারণে সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়। এ সংগ্রহের কাজে নানা বাধা-বিঘ্নের মুখোমুখি হতে হয় সংবাদসংগ্রাহককে। কখনও কখনও মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করা হয়। তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে গত ৩০ অক্টোবর ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায়।
জঙ্গলে শুধু তখন গুলির আওয়াজ। গুলি আর পাল্টা গুলি.. সঙ্গে বারুদের গন্ধ, কয়েকজন মানুষের কণ্ঠস্বর। আর সেই পরিস্থিতিতে জঙ্গলে প্রাণরক্ষায় কার্যত শুয়ে পড়ে নিজের প্রতিরক্ষার চেষ্টা করছিলেন দূরদর্শনের অ্যাসিসট্যান্ট ক্যামেরাপার্সন মোর মুকুট শর্মা। গলার স্বর যতটা সম্ভব নিচু করে তিনি বলছেন, আমরা ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় নির্বাচন কভার করার জন্য এসেছিলাম। এখন জঙ্গলে। আমাদের সঙ্গে কয়েকজন সেনা ছিল। আচমকাই চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলল মাওবাদীরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়াবহ গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। আমি বোধহয় বাঁচব না আর। বাঁচার সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে। মৃত্যু একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে আমার। তবুও কেন জানি একটুও ভয় লাগছে না। মা, এই ভিডিওটা আমি তোমার জন্য বানিয়ে রাখলাম। আমি হয়তো বাঁচব না আর। তবু, একটা কথা বলতে চাই, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মা। খুবই। আমি তোমাকে খুব মিস করব…।
Watch the heart-wrenching footage of a journalist, Mor Mukut Sharma trapped in Maoist-security force crossfire. As bullets whiz by, he films an emotional message to his mother because he’s not sure he’ll make it. Although Sharma survived, his colleague did not. pic.twitter.com/mvI6lAyit6
— Brut India (@BrutIndia) 1 November 2018
পেশাগত কারণে সেনার জওয়ানদের সঙ্গে ছত্তিশগড়ের নির্বাচনের কভারেজে গিয়েছিলেন দূরদর্শনের ক্যামেরাম্যান মোর মুকুট শর্মা। ছত্তিশগড়ের আরানপুরের নিলাব্য গ্রামে সেই সময় হঠাৎই তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মাওবাদীদের একটি দল। সাত আট জওয়ান তখন মাওবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। কার্যত জওয়ান ও সাংবাদিকদের টিমকে ঘিরে ফেলে মাওবাদীদের দল। চলতে থাকে গুলি, পাল্টা গুলির লড়াই। সংঘর্ষে প্রাণ হারান, ২ পুলিশ কর্মী ও দূরদর্শনের ক্যামেরাম্যান ক্যামেরাপার্সন অচ্যুতানন্দ শাহু।
মোর মুকুট শর্মার সঙ্গে ছিলেন সাংবাদিক ধীরজ কুমার ও ক্যামেরাপার্সন অচ্যুতানন্দ শাহু। মাওবাদী হামলায় শহিদ হন অচ্যুতানন্দ। শহিদ হন দুই জওয়ানও। প্রাণ নিয়ে ফিরতে সক্ষম হন ধীরজ ও মোর মুকুট। মোর মুকুটের রেকর্ড করা ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর এই ভিডিও সাংবাদিকতার এক চরম পাঠ দিয়ে গিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতার এক চরম নমুনা মোর মুকুটের এই মর্মান্তিক ভিডিও।