Friday, April 19, 2024
দেশ

চাকরি না করলে মিলবে না মা হওয়ার অনুমতি, সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী গৃহবধূ

কলকাতা: চাকরি করতেই হবে। নইলে মিলবে না মা হওয়ার অনুমতি। দিনের পর দিন স্বামীর সঙ্গে এই নিয়েই বাড়তে থাকে দূরত্ব। প্রতিদিনের এই লাঞ্ছনা, অপমান সহ্য করতে না পেরে শেষে আত্মঘাতী হলেন সাতাশ বছরের তরুণী অনন্যা সাঁই।

গত শুক্রবার বাঁশদ্রোণী এলাকার গড়িয়া সারদা পার্কের ফ্ল্যাট থেকে অনন্যা সাঁই (‌২৭)‌ নামে এক যুবতীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।মৃতদেহ উদ্ধারে গিয়ে পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত সুইসাইড নোটে ওই যুবতী কীভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। তা লেখা রয়েছে,  স্বামী তাঁর ওপর চাকরি করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। চাকরি না মেলায় অযোগ্য বলে রোজ অপমান করা হত, ফলে তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না। অর্ণব এমনও বলে দেন, যে যতদিন না অনন্যা চাকরি পাচ্ছেন, ততদিন তাঁদের বাচ্চা হবে না।

উদ্ধারকৃত সুইসাইড নোট

৮ মাস আগে ধুমধাম করে বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরত বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা অর্ণব সঙ্গে বিয়ে হয় অনন্যার। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই চাকরি করার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয় অনন্যাকে। চাকরি করতে না পারলে বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়া, বাড়ি লিখে দেওয়ার নামেও শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। দিন দিন অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়াচ্ছিল বলে অভিযোগ। এরপর গত শুক্রবার রাতে শ্বশুরবাড়ির ঘরের ভিতর থেকেই উদ্ধার হয় অনন্যার ঝুলন্ত দেহ।

স্বামী অর্ণবের দাবি, বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা দু’জনে একসঙ্গেই টিভি দেখেন। এরপর ঘুমোতে চলে যান। শুক্রবার সকালে উঠে আর অনন্যাকে পাশে দেখতে পাননি। খোঁজাখুঁজির পর পাশের ঘরে স্ত্রীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান তিনি।

মৃতার বাপের বাড়ির অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দেওয়া হত অনন্যাকে। এমএসসি এবং বিএড শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অনন্যা। কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছিলেন না তিনি। এ নিয়ে স্বামী অর্ণব তাঁকে রোজই গঞ্জনা ও অপমান করত।

অনন্যা সাঁই

শেষ চিঠিতে অনন্যা লিখেছেন, “জানো তো, আমায় স্বামী বলেছে চাকরি না পেলে আমার বাচ্চা হবে না। এই অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছি না। আমাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক প্রায় নেই। এটাই ভাল হল, তোমায় রোজ রোজ কাঁদতে হল না।” বাবার উদ্দেশে লেখা, “ভেবো মেয়ের অনেক দূরে বিয়ে দিয়েছ। তোমরা কষ্ট পেয় না।”

যুবতীর স্বামী অর্ণব সাঁইকে অনন্যার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করেছে বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ। দেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এম আর বাঙুর হাসপাতালে।

প্রসঙ্গত অক্টোবরের শেষে একইরকভাবে চাকরির জন্য শ্বশুরবাড়ির মানসিক চাপ, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয় উত্তরপাড়ার মেয়ে পারমিতা বক্সী। তাঁর স্বামী থাকতেন বেঙ্গালুরুতে। চাকরিসূত্রে পুনেয় থাকা পারমিতা আর চাকরি করতে অনিচ্ছুক হলেও কোনওমতেই তাঁকে কাজ ছাড়তে দেওয়া হচ্ছিল না। উল্টে মাইনের পুরো টাকা তাঁকে তুলে দিতে হত শ্বশুরবাড়ির হাতে। মানসিক চাপে তিনিও বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।