Friday, November 15, 2024
সম্পাদকীয়

গণেশ চতুর্থীর মাহাত্ম্য

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: গণেশ পুজো ভারতের সর্বত্র অনুষ্ঠিত হলেও মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, গুজরাট, কর্ণাটক, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে মহোৎসব আকারে আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয়। ভারতের বাইরে নেপালে গণেশপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়। শ্রীলঙ্কায় তামিল হিন্দুরাও এই উৎসব পালন করে থাকেন।বাংলায় গণেশ এক অত্যন্ত জনপ্রিয় দেবতা। বাংলার ঘরে ঘরে পূজিত হয়। বাঙালিরা ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মত গণেশচতুর্থীতে গণেশের পূজা করে না। তবে বর্তমানে গণেশচতুর্থী বা বরদাচতুর্থী তিথিতে ঘরোয়াভাবে গণেশপূজা ধীরেধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। ভাদ্র ও মাঘ মাসের শুক্লচতুর্থী তিথিকে গণেশচতুর্থী বা বরদাচতুর্থী বলে। অগ্নিপুরাণে বলা হয়েছে, অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ ভাদ্রমাসের চতুর্থী বা গণেশচতুর্থী ব্রত করলে, ভগবান গণেশের সাযুজ্য লাভ হয়।

অগ্নিরুবাচ

চতুর্থীব্রতান্যাখ্যাস্যে ভুক্তি-মুক্তিপ্রদানি তে। 

মাঘে শুক্লচতুর্থ্যান্তু উপবাসী যজেদগণম্ ॥ 

পঞ্চম্যাঞ্চ তিলান্নাদী বর্ষান্নির্বিঘ্নিতঃ সুখী।

গং স্বাহা মূলমন্ত্রোঽয়ং গামাদ্যং হৃদয়াদিকম্ ॥ 

আগচ্ছোল্কায় চাবাহ্য গচ্ছোল্কায় বিসর্জনম্।। 

উস্কান্তৈৰ্গাদিগন্ধাদ্যৈঃ পূজয়েন্মোদকাদিভিঃ ॥ 

ওঁ মহোল্কায় বিদ্মহে বক্রতুণ্ডায় ধীমহি।

তন্নো দন্তী প্রচোদয়াৎ ।

মাসি ভাদ্রপদে চাপি চতুর্থীকৃচ্ছিবং ব্রজেৎ । 

চতুর্থঙ্গারকেঽভ্যর্চ্চ্য গণং সৰ্বমবাপ্নুয়াৎ ॥ 

চতুৰ্থাং ফাল্গুনে নক্তমবিঘ্নাখ্যা চতুৰ্থ্যপি।

চতুর্থাং দমনৈঃ পূজ্য চৈত্ৰে প্ৰার্চ্চ্য গণং সুখী ॥

(অগ্নিপুরাণ: ১৭৯.১-৫)

“অগ্নি বললেন,—ভুক্তিমুক্তিদায়ক চতুর্থীব্রতের মাহাত্ম্য কথা বর্ণনা করছি। মাঘ মাসের শুক্ল চতুর্থীতে উপবাসী হয়ে গণদেবতার পূজা করবে । পঞ্চমীতে তিলান্ন ভোজন করলে, বর্ষান্তে নির্দ্বিঘ্ন মুখলাভ হয়ে থাকে । “গং স্বাহা” এ মন্ত্রই গণদেবের পূজার মূলমন্ত্র। মূল মন্ত্রে “আগচ্ছোল্কায়” বলে আবাহন এবং “গচ্ছোল্কায়” বলে বিসর্জন করবে। মোদকাদি ও গন্ধাদি দান করে নিষ্ঠার সাথে পূজা করবে। ভাদ্রমাসের চতুর্থী করলে, সাযুজ্য লাভ হয়। তৎকালে চতুর্থীস্থ অঙ্গারকে গণপূজা করলে, সকল সিদ্ধি লাভ হয়। ফাল্গুন মাসের চতুর্থীকে ‘অবিঘ্নাখ্যা চতুর্থী’ বলে। চৈত্র মাসের চতুর্থীতে ইন্দ্রিয় দমন করে গণদেবতার পূজা করলে সুখ লাভ হয়।”

বাঙালিরা সাধারণত পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের দিন গণেশপূজা করে। প্রত্যেক বাঙালি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নববর্ষের দিনে গণেশ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজার সময় ভগবান গণেশ দেবী দুর্গার সাথে পূজিত হন। দুর্গা প্রতিমার ডানদিকে অথবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাঁদিকে ভগবান গণেশের প্রতিমা স্থাপন করা হয়। পশ্চিম ভারতে কার্তিক অমাবস্যা বা কালীপূজার দিন ঋদ্ধি এবং সিদ্ধি কামনায় ঘরে ঘরে লক্ষ্মী ও গণেশের উপাসনা করে।গাণপত্য শাস্ত্রে শ্রীগণেশের ১০৮ নামের কথা পাওয়া যায়। এ পবিত্র নামগুলো নিত্যপাঠ্য। গ্রহদোষসহ সকল বাধা বিঘ্নের বিনাশ হয়:

শ্রী গণেশের ১০৮টি নাম:

১. গণেশ, ২. গণাধিপ, ৩.গণ, ৪. গণাগ্রহী, ৫. গণাধ্যক্ষ, ৬.গণেশ্বর, ৭.গণনাথ, ৮. গণদেবেশ্বর, ৯. গণচলবাসী, ১০. গণনায়ক, ১১. গণরাজ, ১২. গণকর্ত্তা, ১৩.গণপতি, ১৪.গজানন, ১৫.গৌরীসুত, ১৬.গজকর্ণ, ১৭.গজবক্ত্র, ১৮.গজরাজ, ১৯. গুহাগ্রজ, ২০.গজমুখ, ২১.সুমুখ, ২২. বিঘ্নবিনাশন, ২৩.বিঘ্নরাজ, ২৪.বিঘ্নহারী, ২৫. বিঘ্নবিনায়ক, ২৬. বিঘ্নশাসক, ২৭.লম্বকর্ণ, ২৮. বিঘ্নেশ, ২৯. বিঘ্নবিনাশক, ৩০. বিঘ্নহর্ত্তা, ৩১.মহাবল, ৩২. হরপুত্র, ৩৩. হেরম্ব, ৩৪. স্থূলোদর, ৩৫. মহোদর, ৩৬. বিনায়ক, ৩৭. মহাকায়, ৩৮.প্রিয়ঙ্কর, ৩৯.গণাধীশ, ৪০. রুদ্রপ্রিয়, ৪১.দেবপূজ্য, ৪২. কৃষ্ণপিঙ্গাক্ষ, ৪৩. সুলেখক, ৪৪.ভারতলেখক, ৪৫. ভালচন্দ্র, ৪৬. লম্বোদর, ৪৭. মূষিকবাহন, ৪৮.বজ্রতুণ্ড, ৪৯. সদাদান, ৫০.পাশহস্ত, ৫১. শুভদাতা, ৫২. সিদ্ধিপতি, ৫৩. চতুর্ভুজ, ৫৪. একদন্ত, ৫৫.বিকট, ৫৬.বুদ্ধিপতি, ৫৭.সিদ্ধিসেনাগ্রজ, ৫৮.সিদ্ধিদাতা, ৫৯. সিদ্ধিবিনায়ক, ৬০. সিদ্ধযোগী, ৬১.হর্ষগ্রীবা, ৬২. মহাবীর, ৬৩. সিদ্ধিরূপ, ৬৪. বক্রতুণ্ড, ৬৫. যজ্ঞসিদ্ধি, ৬৬. বিঘ্নরাজেন্দ্র, ৬৭.ধূম্রবর্ণ, ৬৮. দিব্যাঙ্গ, ৬৯. দানসিদ্ধি, ৭০. কর্মসিদ্ধি, ৭১. মোদকপ্রিয়, ৭২.তপঃসিদ্ধি, ৭৩. সর্ব্বসিদ্ধিদাতা, ৭৪.সর্ব্বজ্ঞ, ৭৫. স্বস্তিদ, ৭৬. ঋদ্ধিদ, ৭৭. ঋতজ্ঞান, ৭৮.ঋতধাম, ৭৯. ঋতম্ভরা, ৮০. সত্যম, ৮১. গুণাতীতম, ৮২.পুরুষ, ৮৩. ত্রিলোচন, ৮৪.শুদ্ধাত্মা, ৮৫. দ্বিমুখ, ৮৬.ভক্তবৎসল, ৮৭.শৈলসুতাসুত, ৮৮. ঋতম্, ৮৯. অগ্রপূজ্য, ৯০.বিশ্বনেত্র, ৯১.শুভানন, ৯২. সর্বশুভঙ্কর, ৯৩. বিকোটোদর, ৯৪. দ্বৈমাতুর, ৯৫. বরেণ্য, ৯৬. ভর্গ, ৯৭.অক্ষর, ৯৮. বিরাটপতি, ৯৯. ব্রহ্মবর্চ্চস, ১০০.ব্রহ্মভূয়, ১০১. ব্রহ্মযোগ, ১০২. গণশ্রেষ্ঠ, ১০৩.সুব্রক্ষণ্যাগ্রজ, ১০৪. প্রণব, ১০৫. অদ্বৈতস্বরূপ, ১০৬. অষ্টবিনায়ক, ১০৭. জ্যোর্তিস্বরূপ ও ১০৮. প্রমোদ।

কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 

সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়