২ এপ্রিল থেকে ভারত ও চিনের ওপর পারস্পরিক শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা ট্রাম্পের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে ভারত ও চীনের বিরুদ্ধে পারস্পরিক শুল্ক (Reciprocal Tariffs) ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এটি তার প্রেসিডেন্সির প্রথম বড় নীতিগত পদক্ষেপগুলোর একটি, যা তিনি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া দীর্ঘতম ভাষণে উল্লেখ করেছেন।
কংগ্রেসে রেকর্ড-দীর্ঘ ভাষণ
মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পের ভাষণ ছিল দীর্ঘতম—১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, যা আগের রেকর্ডধারী প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ১ ঘণ্টা ২৮ মিনিটের বক্তব্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। ভাষণে তিনি আমেরিকার বাণিজ্য, পররাষ্ট্রনীতি, নিরাপত্তা, ও অর্থনীতির বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
ভারত ও চীনের ওপর নতুন শুল্ক
ট্রাম্প তার ভাষণে বলেন, “শুল্ক শুধু আমেরিকান চাকরি রক্ষার জন্য নয়, এটি আমাদের দেশের আত্মা রক্ষার জন্যও জরুরি।” নতুন শুল্ক নীতির ফলে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার ইঙ্গিত
ট্রাম্প জানান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি চিঠিতে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর আগে, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং আলোচনা ভেস্তে যায়।
মার্কিন কংগ্রেসে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ
ট্রাম্পের ভাষণের সময় রিপাবলিকান সদস্যরা একাধিকবার করতালি দিয়ে তাকে সমর্থন জানান। বিশেষত, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এলন মাস্ককে ট্রাম্প প্রশংসা করলে মাস্ক উঠে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে অভিবাদন জানান। তবে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কংগ্রেস সদস্য আল গ্রিন ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং বক্তৃতার মাঝেই তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে বের করে দেন।
আফগানিস্তানে ১৩ মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত গ্রেপ্তার
ট্রাম্প জানান, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় বোমা হামলায় নিহত ১৩ মার্কিন সেনার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে পাকিস্তানের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তকে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুল্ক নীতির ভবিষ্যৎ প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতি আমেরিকান বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে তিনি এই নীতির মাধ্যমে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দর্শন বাস্তবায়ন করতে চান।
শুল্কনীতি নিয়ে আলোচনা করতে আমেরিকা সফরে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল
এই ঘোষণার পর ভারত ও চীন কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ভারতের তরফে বাজেটে আমেরিকা থেকে আমদানি করা পণ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে মোদী সরকার। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করে ভারতের বাজার আমেরিকার পণ্যের জন্য আরও খুলে দেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে মোদী সরকার। ইতিমধ্যেই রবিবার রাতে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল আমেরিকায় গিয়েছেন। জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে শুল্কনীতি নিয়ে বোঝাপড়া করতেই বাণিজ্যমন্ত্রীর এই আমেরিকা সফর।