৫ বছরের মেয়েটির হার্ট অপারেশনের জন্য চাই ৫ লাখ টাকা, অর্থ সংগ্রহে পথে নামলেন পুলিশকাকুরা
চেন্নাই: ফের আরও একবার পুলিশকর্মীদের মানবিক দিকটি সামনে এল। পাঁচ বছর বয়সী কভিষ্কার হার্ট অপারেশনের জন্য দরকার ছিল পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে মেয়ের অপারেশনের জন্য টাকা জোগার করতে পারেননি কার্তিক। এই পরিস্থিতিতে শিশুটির ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য মাঠে নেমে পড়েন এক কনস্টেবল ও ইন্সপেক্টর। খুদের জীবন বাঁচাতে অর্থ সংগ্রহ করেন তাঁরা। ওই দুই পুলিশকর্মীর আর্শীবাদে পাঁচ বছরের কভিষ্কা গত শনিবার সাত ঘন্টা অপারেশনের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
জানা যায়, কভিষ্কার বাবা কার্তিক পেশায় শহরের একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানের সেলসম্যান। লকডাউনের শুরু হতেই সেই কাজটিও হারান কার্তিক। তাঁর পক্ষে কোনওমতেই সম্ভব ছিল না মেয়ের অপারেশনের টাকা জোগার করার। এই পরিস্থিতিতে নন্দামবক্কাম থানার হেড কনস্টেবল পি সেন্থিল কুমার এবং ইন্সপেক্টর এম থানগরাজ (P Senthil Kumar and police inspector M Thangaraj) পাঁচ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দেন।
পুলিশ কনসটেবল সেন্থিল কুমার বলেন, আমি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারি লকডাউনের জেরে কাজ না থাকায় ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিলেন কার্তিক। মেয়ের চিকিৎসা খরচ বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাঁকে। এরমধ্যে অপারেশনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা লাগবে শুনে মাথায় বাজ পড়ে তাঁর। হাতে টাকা তো দূর, দু’বেলা খাবার জোগাড় করাটাই দুষ্কর হয়ে ওঠে কার্তিকের পক্ষে।
লকডাউনের জেরে খরচ জোগাতে না পেরে মেয়ের চিকিত্সাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন কার্তিক। এদিকে কভিস্কার শারীরিক অবস্থারও অবনতি হচ্ছিল। ডাক্তাররা কভিস্কার দ্রুত ওপেন হার্ট সার্জারির কথা বলেন। ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন, দ্রুত অপারেশন না করতে পারলে ওই শিশুকে যে বাঁচানো যাবে না।
এই পরিস্থিতিতে কার্তিকের পাশে দাঁড়ান পুলিশ কনস্টেবল সেন্থিল। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কভিস্কার অপারেশনের জন্য কার্তিককে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। বাকি টাকা জোগাড় করতেও বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। বাকি টাকার জন্য তিনি থানার ইন্সপেক্টর এম থানগরাজকে জানান। ইন্সপেক্টর গোটা থানার পুলিশকর্মীদের টাকা তোলার দায়িত্ব দেন। থানা থেকে মোট টাকা সংগ্রহ হয় ৪৫ হাজার টাকা।
পুলিশকর্মীরা অর্থ সংগ্রহের কাজে নেমে পড়েন। এরপর নন্দাম্বাক্কমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সার্জারি হয় কভিষ্কা। পুলিশকর্মীদের সৌজন্যে চেনা-অচেনা মানুষ ছোট্ট মেয়েটির প্রাণ বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বর্তমানে সুস্থ আছে কভিষ্কা। গত শনিবার রাতে হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইন্সপেক্টর থানগরাজ বলেন, আমাদের ভাগ্য ভালো যে সময়মতো টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলাম। তার জন্যই মিষ্টি মেয়ে কভিস্কার প্রাণ বেঁচে গিয়েছে। আমরা আশা করছি, এইভাবেই দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াক দেশবাসী। কভিষ্কার বাবা কার্তিক বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন পুলিশদের সাথে আমার খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমি কখনই ভাবিনি যে খাকি উর্দিধারী কোনও মানুষ আসলে আমার বাচ্চাকে বাঁচাতে পারবে।