বাংলাদেশে হাসিনাপন্থী ৮৪ আইনজীবীকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক— বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতা, হামলা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামীপন্থি ৯৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৮৪ জনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার (৬ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এই আদেশ দেন। জামিনপ্রাপ্ত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই নারী আইনজীবী।
আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জামিন আবেদন করেন অভিযুক্তরা। দুপুরের পর থেকে শুনানি শুরু হয়ে বিকেল ৫টার পর আদালত রায় ঘোষণা করেন। আদালত ৮৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম গণমাধ্যমকে জানান, “আসামিপক্ষে জামিন চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করে। আদালত শুনানি শেষে ৯ জনকে জামিন দেন, যাদের মধ্যে ৮ জন নারী আইনজীবী।”
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদির রহমাম মামিক, শাহ আলম, মাহবুবুর রহমান, আবু সাইদ সাগর, আসাদুর রহমান রচি, এবং সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামিমসহ প্রভাবশালী আইনজীবীরা।
মামলার পটভূমি
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ঢাকা আইনজীবী সমিতির প্রাঙ্গণে সহিংস ঘটনার সূত্র ধরে ৬ ফেব্রুয়ারি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু। অভিযোগে বলা হয়, ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বেআইনি সমাবেশে জড়ো হয়ে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও বোমা নিয়ে সহিংসতা চালান। ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই’, ‘রাজপথ ছাড়ি নাই’— এমন স্লোগান দিতে দিতে তারা আইনজীবী চেম্বারে হামলা চালান।
মামলার অভিযোগ অনুসারে, আইনজীবী মোহাম্মদ আলী বাবুর ওপর হামলার সময় আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন পিস্তল তাক করে গুলি করার চেষ্টা করেন এবং ওয়াকিল লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন, যার ফলে তিনি গুরুতর জখম হন। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী কিলঘুষি ও লাঠি-রডের আঘাতে আহত হন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর করে মূল্যবান মালামাল লুটপাট করা হয় এবং সমিতির সম্পত্তিতে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
জামিন ও আইনি প্রক্রিয়া
আগস্টের ঘটনার পর অভিযুক্ত ১৪৪ জনের মধ্যে ১১৫ জন হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নেন। সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে, অর্থাৎ ৬ এপ্রিল ৯৩ জন অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তবে আদালত অধিকাংশের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এই মামলার প্রেক্ষাপটে বিচারিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে আইনজীবী মহলে চাঞ্চল্য ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিচারপ্রার্থীদের অনেকে এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন।