Thursday, April 25, 2024
সম্পাদকীয়

আজ বিশ্ব এইডস দিবস: ‘স্বাস্থ্য আমার অধিকার’

আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। প্রতিবারের মতো এবারও ভারতে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো— ‘স্বাস্থ্য আমার অধিকার’।

এইডস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে ‘বিশ্ব এইডস দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। ইউএন-এইডস এর তথ্যমতে, বিশ্ব মানবতার জন্য মারাত্মক হুমকি এইডস (AIDS-Acquired Immune Deficiency Syndrome)। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৬৭ মিলিয়ন মানুষ এইডস এ আক্রান্ত। এ পর্যন্ত প্রায়  সাড়ে তিন কোটি মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছে। এখনও এ রোগের কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বর্তমানে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং আমৃত্যু এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়।

দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এইডস-এর প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করা হয় লালফিতা। লালফিতার মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতাসহ প্রতিরোধের অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়। রোগটি কীভাবে বিস্তার করে কিংবা রোগটি প্রতিরোধে কী কী করণীয় এ সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক।

যেভাবে এইডস ছড়ায়ঃ

ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে অবাধ অরক্ষিত যৌনসঙ্গমই এইডস রোগের অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে পেশাদার যৌনকর্ম সংঘটিত হয়। মহিলা যৌনকর্মীরা যৌনপল্লীতে, আবাসিক হোটেলে যৌনকর্ম সম্পন্ন করে। পেশাদার যৌনকর্মী ও তার খদ্দেরদের মধ্যে যৌনরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।

সংক্রমণ:

এইচআইভি ভাইরাস মোটামুটি তিন প্রকারের ছড়াতে সক্ষম।

১) যৌনমিলনের সময়

২) রক্ত (blood) বা লসিকার (lymph) মাধ্যমে

৩) মা থেকে সন্তানে

সনাক্তকরণ: 

বায়ু,জল, খাদ্য অথবা সাধারণ ছোঁয়ায় বা স্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না। এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থে (রক্ত, বীর্য, বুকের দুধ) বেশি থাকে। ফলে, মানব দেহের এই তরল পদার্থগলো আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারে তা হল:

১) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে।

২) আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সূঁচ বা সিরিঞ্জ এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির রেজার, ব্লেড ইত্যাদি অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে।

৩) আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে।

৪) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে (গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা সন্তানের মায়ের দুধ পানকালে)।

৫) অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে(যৌণ মিলন কতটা স্থায়ী কিংবা বীর্যপাত হলো কি না তার উপরে এর সংক্রমণ নির্ভর করেনা, অরক্ষিত যৌণ মিলনে অধিকাংশ সময়ে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে)।

প্রতিকার:

এইচআইভি বা এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলো:

১) অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আগে রক্তে এইচআইভি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া।

২) ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।

৩) অবৈধ অনিরাপদ যৌনসঙ্গম পরিহার করতে হবে ও যৌন মেলামেশায় স্বামী এবং স্ত্রীকে একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস থাকতে হবে। সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করা উচিত।

৪) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

৫) কোন যৌন রোগ থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

৬) ধর্মীয় রীতিনীতি, সামাজিক ও পারিবারিক অনুশাসনগুলো মেনে চলা।

এখনও পর্যন্ত এইডসের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, তাই প্রতিরোধই একমাত্র সমাধান এবং ব্যাপক গণসচেতনতা হতে পারে এইডসের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর হাতিয়ার। আসুন এইচআইভি বা এইডস সম্পর্কে নিজে জানি, অন্যকেও জানাই।