Thursday, November 7, 2024
দেশ

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হারের পিছনে অন্যতম কারণ ‘এনআরসি ভীতি’

কলকাতা: একুশের বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ছিল দুশোর বেশি আসনে জয়লাভ করা। কিন্তু গেরুয়া শিবির তিনের অঙ্কেও পৌঁছতে পারেনি। ২৯২টি আসনের মধ্যে ৭৭টি আসনে জয়লাভ করেছে পদ্ম শিবির। বিজেপি এই ফলাফলের জন্য অনেকটাই দায়ী জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তথা এনআরসি ইস্যু।

আমরা জানি যে, পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে আগত। বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহত। ১৯৭১-২০১৩ সাল অবধি গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা ২৮% থেকে ৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই বলা হয় সুন্দরবনের বাঘ নয়, হু হু করে কমতে কমতে বাংলাদেশের হিন্দুরা আজ ‘বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী’ হিসেবে পরিণত হয়েছে!

বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের গবেষণা গ্রন্থ ‘এ্যান ইনকোয়ারি ইন টু কজেস এন্ড কনসিকোয়েন্সেস অফ ডিপ্রাইভেশন অফ হিন্দু মাইনরিটিজ ইন বাংলাদেশ থ্রু দ্য ভেস্টেড প্রপার্টি এ্যাক্ট (প্রিপ ট্রাস্ট, ২০০০ সাল)’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৪ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতি বছর ১,৯৬,২৯৬ জন হিন্দু বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছেন ৫৩৮ জন মানুষ।

প্রশ্ন হচ্ছে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ কোথায় যাচ্ছে? অবশ্যই কাঁটাতার পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে তাঁরা। তাদের সবাই এখনও সব ধরনের কাগজপত্র তৈরি করতে পারেনি। শুধু তাঁরা নয়, এমনকি দশকের পর দশক ধরে রাজ্যে বসবাস করছে তাদের অনেকেরই সব ধরনের কাগজপত্র নেই। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি এনআরসি ইস্যু তাদের মনে ভয়ের জন্ম দিয়েছিল।

যদিও বিজেপির তরফে ভরসা দেওয়া হয়েছিল, নাগরকিত্ব সংশোধনী আইনের (CAA) মাধ্যমে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ শরণার্থীদের দেওয়া নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে ভারতে প্রবেশ করে থাকে, তবে তাঁরা এই আইনের আওতায় ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।

প্রশ্ন হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের হিন্দু, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ শরণার্থীদের অবস্থা কি হবে? তাছাড়া অসমের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া তালিকা অনেক হিন্দুদের নাম বাদ গিয়েছে। যাদের অনেকেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে এদেশে চলে এসেছেন। তাই অসমের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) খতিয়ে দেখার জন্য ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা দিয়েছে সে রাজ্যের এনআরসি কোঅর্ডিনেটর। এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতকে তাঁরা জানিয়েছে, এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় গুরুতর ভুল ধরা পড়েছে। তাই ওই তালিকা ফের যাচাই করা প্রয়োজন।

যদিও বঙ্গ বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের এনআরসি তালিকা করা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে। এখানে কোনও হিন্দুকেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না। তবুও মানুষের ভয় কাটিনি। অন্যদিকে, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর গলায় বলেছিলেন তিনি বেঁচে থাকতে বাংলায় কখনই এনআরসি হতে দেবেন না। তাই হয়তো বাংলায় মানুষ তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছে।

অসমের বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টও নতুন করে এনআরসির নথি পরীক্ষা না করার আর্জি জানিয়েছে। ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, এনআরসি নামক মরীচিকার পেছনে ছুটে বিগত সরকারের মেয়াদের অধিকাংশ সময় নষ্ট হয়েছে বিজেপি। সরকারি কোষাগার থেকে ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। জনগণের অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, পোহাতে হয়েছে চরম মানসিক দুর্ভোগ। অনেকে আত্মহত্যাও করেছেন। এখন ফের রিভেরিফিকেশন ফের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।