ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে তৃণমূল
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: লোকসভায় টানা ১৩ ঘণ্টা বিতর্কের পর ভোটাভুটির মাধ্যমে পাশ হয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল। বৃহস্পতিবার এটি রাজ্যসভায় তোলা হবে, যেখানে বিলটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এরপর তা আইনে পরিণত হবে। এই বিল ঘিরে ইতিমধ্যেই বাংলার রাজনৈতিক পরিসরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করছে এবং বৃহস্পতিবার থেকেই তারা রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াকফ সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে। বাংলার মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, এই বিলের ফলে ধর্মীয় মেরুকরণ আরও প্রকট হবে। যদিও কোনও কোনও দলের নেতারা সরাসরি এ কথা বলছেন না, তবে বিভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সংখ্যালঘুদের মধ্যে এই বিল নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হলে তৃণমূল নির্বাচনী ফায়দা তুলতে পারে। অপরদিকে, বিজেপি ‘দোদুল্যমান’ হিন্দু ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে পারবে। নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের মতে, এই মেরুকরণের পেছনে শুধু ধর্মীয় কারণ নয়, বরং ‘রিয়্যাল এস্টেট লবি’-র স্বার্থও থাকতে পারে।
বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলা রাজনীতি মেরুকরণের জালে আটকে রয়েছে। বিজেপি একদিকে হিন্দু ভোট একত্রিত করতে সচেষ্ট, অন্যদিকে তৃণমূল সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখতে এবং আরও প্রসারিত করতে তৎপর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক ফুরফুরা সফরকেও সেই কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলার ২৯৪টি বিধানসভার মধ্যে প্রায় ৭৪টি আসন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। পাশাপাশি আরও ২০-২৫টি আসন রয়েছে, যেখানে সংখ্যালঘু ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব মিলিয়ে অন্তত ১০০টি আসনে সংখ্যালঘু ভোট নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে। আনুমানিকভাবে রাজ্যের মুসলিম ভোটার সংখ্যা ৩০ শতাংশ হলেও, বাস্তবে তা আরও কিছুটা বেড়েছে বলে অনেকের ধারণা। তবে গত দেড় দশকে কোনও জনশুমারি না হওয়ায় নির্ভুল পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের ফলে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ কীভাবে বদলাবে, তা আগামী দিনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তবে এখনই বলা যায়, এই বিল রাজনীতির মাঠে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে এবং বাংলার রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে।