১২৮-৯৫ ব্যবধানে রাজ্যসভায় পাশ ওয়াকফ সংশোধনী বিল
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার বিতর্ক ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডার পর রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১২৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৯৫টি। বিরোধীরা ডিভিশন চাইলে প্রায় ভোররাত পর্যন্ত অধিবেশন চালিয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে এই বিল গৃহীত হয়।
বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তিনি দাবি করেন, এই সংশোধনীর ফলে ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে রাজস্ব বাড়বে, যার উপকার পাবে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মুসলমান। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ৪.৯ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি ছিল, যেখান থেকে সম্ভাব্য আয় হতে পারত ১২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তখন আয় হয়েছিল মাত্র ১৬৩ কোটি। ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকার আইন সংশোধন করলেও আয় বাড়েনি। সেই জায়গা থেকেই নতুন সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন রিজিজু।
বিলটির সমর্থনে মুখ খুলেছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাও। তাঁর মতে, কংগ্রেস মুসলিম মহিলাদের দীর্ঘদিন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে রেখেছে। এই বিলের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের আর্থিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে বলে তাঁর দাবি।
অন্যদিকে, বিরোধীরা বিলটির কড়া বিরোধিতা করেছেন। কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, “বিজেপি এই বিলের মাধ্যমে দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে। এর মাধ্যমে মুসলিমদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তা প্রধানমন্ত্রীর ব্যবসায়ী বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” তিনি বিলটিকে অসাংবিধানিকও বলে অভিহিত করেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও উঠে আসে তীব্র বিরোধিতা। সাংসদ নাদিমূল হক বলেন, “এই বিল একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে। আজ ওয়াকফ, কাল মন্দির, গির্জা, গুরুদ্বার — এই দৃষ্টিভঙ্গি ভয়ঙ্কর।” তাঁর মতে, এটি কেবল ধর্মীয় নয়, একটি সাংবিধানিক সংকট। তিনি জানান, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত হানবে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মূল কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিভিন্ন দলের অবস্থান বিলটির ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। জেডিইউ এবং টিডিপি আগেই এনডিএ-কে সমর্থনের ঘোষণা দেয়। বিজেডি কোনও হুইপ জারি না করায়, তাদের সাংসদরা স্বাধীনভাবে ভোট দেন।
শেষ পর্যন্ত ১২৮-৯৫ ব্যবধানে বিলটি পাশ হয় রাজ্যসভায়। এবার বিলটিতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে।