১ লাখ কোটি গাছ লাগালেই পাবেন ১০০ বছর আগের নির্মল বাতাস
জলবায়ু সংকট ও বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে এক লাখ কোটি গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কমপক্ষে এক লাখ কোটি গাছ লাগালে কমবে বাতাসে মিশে থাকা বিষের পরিমাণ। আমাদের বায়ুমণ্ডল হয়ে উঠবে ১০০ বছর আগের মতো। সুইজারল্যান্ডের জুরিখে সুইস ফেডারাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ETH Zurich) হালের একটি গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ। বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে গাছ লাগানো কর্মসূচি সবচেয়ে ভালো ও কম ব্যয়বহুল উপায়। গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে কার্বন নিঃসরণ দুই-তৃতীয়াংশ কমানো যাবে। চাষাবাদের জমি ও নগর এলাকাগুলোকে বাদ দিয়ে এ হিসাব করেছেন তাঁরা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র গাছ লাগালেই জীবন বাঁচবে। তা না হলে যে হারে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে ফুলে-ফেঁপে ওঠা সমুদ্রের জলেই তলিয়ে যেতে হবে আমাদের। কারণ, উষ্ণায়নের জেরে বরফ গলছে অস্বাভাবিক দ্রুত হারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ত্বরান্বিত হচ্ছে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কাও। আর বিশ্বজোড়া শিল্পায়নের দৌলতে বাতাস ভয়ঙ্করভাবে বিষিয়ে উঠছে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড-সহ নানা ধরনের গ্রিন হাউস গ্যাসে। যা তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর।
বিশ্বজুড়ে ১৭০ কোটি হেক্টর জমি বৃক্ষহীন অবস্থায় আছে। এর পরিমাণ বিশ্বের মোট ভূমির ১১ শতাংশ। এসব জমিতে স্থানীয় গাছ লাগানো হলে তা প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠবে। নতুন এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন সুইস ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টমাস ক্রাউথার (Thomas Crowther)। তিনি বলেন, নতুন এ সংখ্যাগত মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে দেখা গেছে এটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট সমাধানের একটি উপায়ই নয়, বরং এটি সর্বোৎকৃষ্ট পথ। আমি ভেবেছিলাম নতুন করে বনায়নের বিষয়টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমাধানের সেরা দশটি উপায়ের একটি হবে। তবে সব সমাধান প্রস্তাবের মধ্যে এটি সর্বসম্মতিক্রমে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এক লাখ কোট গাছ লাগাতে জমির অভাব হবে না। গবেষণায় হিসাব কষে দেখানো হয়েছে, যদি আমার, আপনার সদিচ্ছা আর আন্তরিকতা থাকে দ্রুত এক লাখ কোটি গাছ বসিয়ে ফেলার, তা হলে, অন্তত জায়গার অভাবে সেই সব গাছের বেড়ে উঠতে ও বেঁচে থাকতে কোনও অসুবিধা হবে না।
পৃথিবীর স্থলভাগের যতটা নিয়েছে শহর আর গ্রাম, চাষাবাদের জন্য সেই জমিতে যতটা ভাগ বসানো হয়েছে, তাকে হিসাবের বাইরে রেখেও গবেষকরা দেখিয়েছেন, গাছ বসানোর জন্য ৩৫ লাখ বর্গ মাইল বা ৯০ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পড়ে রয়েছে পৃথিবীতে। জায়গাটা মোটেও কম নয় কিন্তু।
গবেষণা এও জানানো হয়েছে, প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ফলে বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণে কার্বন জমা হয়েছে, এক লাখ কোটি গাছ খুব তড়িঘড়ি বসিয়ে ফেলা সম্ভব হলে তার ২৫ শতাংশই বায়ুমণ্ডল থেকে সরে যাবে। বায়ুমণ্ডল হয়ে যাবে ১০০ বছর আগেকার মতো।