মাদ্রাসা নিয়োগে খাতা জমা দেওয়ার পর OMR ভরাট, CFSL রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির আরেকটি চাঞ্চল্যকর দিক উঠে এলো কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (CFSL) রিপোর্টে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে CFSL-এর তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষায় যোগ্য প্রার্থীদের অযোগ্য প্রমাণ করতে ওএমআর (OMR) শিটে কারচুপি করা হয়েছে।
OMR শিটে কারচুপির প্রমাণ মিলেছে
২০২২ সালে বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের করেন যে, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষায় ওএমআর শিটে কারচুপি হয়েছে। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় CFSL-কে ওএমআর শিট পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। সম্প্রতি CFSL রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে প্রতিটি খাতায় অন্তত একটি স্থানে এমন কালি দিয়ে গোল করা হয়েছে, যার সঙ্গে পরীক্ষার্থীর পেনের কালির মিল নেই।
নিয়োগ পরীক্ষার কাঠামো ও কারচুপির ধরন
মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার চারটি ভাগ ছিল। প্রথম ভাগে ২৮ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর বাধ্যতামূলক ছিল, এবং পরবর্তী তিনটি ভাগের মধ্যে যে কোনো একটির উত্তর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কোন পরীক্ষার্থী কোন ভাগের উত্তর দিচ্ছেন, তা ওএমআর শিটের প্রথম পাতায় চিহ্নিত করার নিয়ম ছিল। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, কারচুপির মাধ্যমে অনেক পরীক্ষার্থীর শিটে অতিরিক্ত অপশন চিহ্নিত করা হয়েছে, যার ফলে তাদের মূল্যায়নে বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা
আবদুল হামিদ নামের এক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন যে, তিনি A ও B বিভাগে গোল চিহ্ন দিয়েছিলেন, কিন্তু তার ওএমআর শিটে পরে C বিভাগেও গোল করা অবস্থায় দেখা যায়। এর ফলে তার পরীক্ষার মূল্যায়ন পরিবর্তিত হয় এবং তিনি চাকরির সুযোগ হারান। তার দাবি, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনো লাভ হয়নি।
আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া
আবদুল হামিদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, “এখানে শুধু অযোগ্য প্রার্থীদের টাকা বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়নি, বরং যোগ্য প্রার্থীদেরও ইচ্ছাকৃতভাবে অযোগ্য প্রমাণ করার জন্য ওএমআর শিটে কারচুপি করা হয়েছে। এবার সেটার প্রমাণ প্রকাশ্যে এসেছে।”
রাজ্য সরকারের স্বচ্ছতার প্রশ্নে ফের বিতর্ক
CFSL-এর এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাকরি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিপূর্বেও শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক দুর্নীতি সামনে এসেছে, যার ফলে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত একাধিক মামলা হয়েছে। এবার মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির তথ্য সামনে আসায় রাজ্যের প্রশাসনিক সততার বিষয়টি আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীরা ন্যায়বিচার পাবেন?
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীরা ন্যায়বিচার পাবেন কিনা, তা সময়ই বলবে।