মহাকাশে সুনীতার সঙ্গে ছিল গণেশ মূর্তি এবং ভগবত গীতা
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মহাকাশের নিঃসঙ্গতা, প্রযুক্তিগত বিপর্যয় এবং দীর্ঘ ৯ মাসের অজানা অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে অটুট মনোবল নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এলেন নাসার মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। ২০২৪ সালের ৫ জুন মহাকাশযাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি, যার মেয়াদ ছিল মাত্র আট দিন। কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে তিনি দীর্ঘ ৯ মাস মহাশূন্যে আটকে ছিলেন। অবশেষে, গত বুধবার ফ্লোরিডা উপকূলে স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে চড়ে নিরাপদে পৃথিবীতে অবতরণ করেন।
আধ্যাত্মিক শক্তির অবলম্বন
মহাকাশের কঠিন পরিস্থিতিতে সুনীতা উইলিয়ামসের মানসিক দৃঢ়তা, ধৈর্য এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাসই ছিল তার প্রধান শক্তি। প্রথম মহাকাশ অভিযানে (২০০৬ সালে) তিনি সঙ্গে নিয়েছিলেন ভগবদ গীতার একটি কপি। তার বিশ্বাস, গীতার কর্মযোগের বার্তা জীবনের প্রতিটি সংগ্রামে জয়ী হতে সহায়ক। নিঃসঙ্গ মহাশূন্যে গীতার শিক্ষা তাকে মানসিকভাবে স্থির এবং শক্তিশালী থাকতে সাহায্য করেছে।
২০১২ সালে দ্বিতীয় মহাকাশ অভিযানের সময় তিনি শিবের একটি ছবি এবং ওঁ প্রতীকও সঙ্গে নিয়েছিলেন। তার মতে, আধ্যাত্মিক শক্তির সংস্পর্শে থাকায় তিনি আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য বজায় রাখতে সক্ষম হন।
গণেশের প্রতি অবিচল আস্থা
২০২৪ সালের অভিযানে যাওয়ার সময় সুনীতা গণেশের একটি মূর্তি সঙ্গে নিয়েছিলেন। গণেশকে তিনি বাধা-বিনাশক এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মানেন। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে যখন দীর্ঘ ৯ মাস মহাশূন্যে কাটাতে হয়, তখনও গণেশের প্রতি তার বিশ্বাস অটুট ছিল। তিনি মনে করেন, গণেশের আশীর্বাদ তাকে সমস্ত বাধা থেকে রক্ষা করেছে এবং নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করেছে।
দোল মাতার আশীর্বাদ: পৈতৃক গ্রামের বিশ্বাস
সুনীতা উইলিয়ামসের পৈতৃক গ্রাম ভারতের গুজরাটের ঝুলসান। গ্রামের কুলদেবী দোল মাতার প্রতি তার গভীর ভক্তি রয়েছে। প্রথম মহাকাশযাত্রার আগে তিনি মন্দির থেকে প্রসাদ হিসেবে একটি চুনারি নিয়ে গিয়েছিলেন। তার মহাকাশযাত্রার সময় গ্রামে দোল মাতার মন্দিরে টানা ৯ মাস ধরে বিশেষ প্রার্থনা চলেছিল। মন্দিরে অখণ্ড জ্যোতি প্রজ্জ্বলিত করে ধারাবাহিক প্রার্থনার মাধ্যমে তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছিল।
আধ্যাত্মিকতা ও বিজ্ঞান: এক অনন্য মেলবন্ধন
সুনীতা উইলিয়ামস শুধু একজন বিজ্ঞানী বা মহাকাশচারী নন, বরং আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী এক সাহসী নারী। মহাকাশের নিঃসঙ্গতা, চরম প্রতিকূলতা এবং প্রযুক্তিগত বিপর্যয় সত্ত্বেও তিনি আধ্যাত্মিক বিশ্বাসকে শক্তির উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। গীতা, গণেশ, শিব এবং দোল মাতার প্রতি তার গভীর আস্থা তাকে মানসিকভাবে স্থির ও দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছে।
আধ্যাত্মিকতার শক্তি
সুনীতা উইলিয়ামসের এই মহাকাশযাত্রা শুধু বৈজ্ঞানিক সাফল্যের উদাহরণ নয়, বরং আধ্যাত্মিকতার শক্তির অনন্য উদাহরণ। তার জীবন আমাদের শেখায় যে কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও মানসিক দৃঢ়তা মানুষের মনোবলকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে। মহাকাশের নিঃসঙ্গতা থেকে পৃথিবীর উষ্ণতায় ফিরে আসার এই সাহসিক গাঁথা সারা বিশ্বের কাছে প্রেরণার এক অনন্য নিদর্শন।