Saturday, July 27, 2024
সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের যশোরের প্রাচীন শ্রীধরপুর শ্যামা ও শিব মন্দির বর্তমানে সমস্যায় জর্জরিত

সংগ্রাম দত্ত: বাংলাদেশের যশোর জেলার অভয়নগর থানার শ্রীধরপুর গ্রামে অবস্থিত প্রায় ৪শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ির শ্যামা ও শিব মন্দির। এক সময় কালের সাক্ষী হয়ে ঐতিহ্য ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ৪শ বছরের পুরোনো মন্দির দুটি আজ বিলুপ্তির পথে। এমন অবস্থায় মন্দিরটি দ্রুত সংস্কার ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।

স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, ৪শ বছর আগে তৎকালীন জমিদার বনমালী বসু তার বাড়ির কাছে ইট ও সুরকি দিয়ে পারিবারিক পূজা অর্চনার জন্য এই মন্দির নির্মাণ করেন। জমিদার বাড়ির বিগ্রহ মন্দিরটির শিব ও শ্যামা মন্দির নামে পরিচিত। এক সময় জমিদার পারিবারিক এই বিগ্রহ মন্দিরে প্রতিদিন পূজা অর্চনা হতো। বছরজুড়ে শ্যামা পূজাসহ ছোট-বড়, নানা ধরনের পূজা-অর্চনা এবং ধর্মীয় উৎসবে মুখরিত থাকত মন্দিরটি। সকাল-সন্ধ্যা বাজত শঙ্খধ্বনি। মন্দিরে জমিদার বাড়ির নারীরা দলবেঁধে পূজা করতেন। দূর-দূরান্তের পূজারিরাও আসতেন মাঝে মধ্যে এখানে।

জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পরও অনেক দিন চলেছিল স্থানীয় হিন্দুদের ধর্মীয় পূজা-অর্চনা। সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে জমিদারদের ব্যাপক পদচারণা ছিল। হুগলি থেকে আসা জমিদার বনমালী বসু আনুমানিক ১৭৫৬-৫৯ খ্রিষ্টাব্দে এখানে জমিদার বাড়ি, কালী মন্দির, শিব মন্দির, দিঘি, বৈঠকখানা, নাট্যশালাসহ প্রায় ৪০-৫০ একর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন।

মূলত এসব রাজবাড়ী থেকে এ অঞ্চলের খাজনা আদায় করা হতো। এসব বাড়ি ও মন্দির ছিল তৎকালীন সেরা স্থাপত্য। জমিদার বাড়ি ও মন্দির এসব স্থাপত্যের মধ্যে একটি। তবে এখন এটি দেখলে মনে হয় একটি পোড়াবাড়ি।

স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে জমিদার বাড়িতে আছে দুটি মন্দির। এখানে প্রতি বছর শ্যামা পূজা হয়। পাশে রয়েছে শিব মন্দির। সেখানেও শিব পূজা হয়ে থাকে। যে দুটি মন্দির আছে তা নাজুক অবস্থায় আছে। এখন মূল জমিদার বাড়ির তেমন কোনো নিদর্শন চোখে পড়ে না। মন্দিরের পাশে দুটি বড় দিঘি রয়েছে। আছে শানবাঁধা ঘাট। তা ছাড়াও এখানে আরও মন্দির ছিল। তা ধ্বংস করা হয়েছে। রাতের আঁধারে ইটগুলো চুরি হয়ে থাকে, বলেছেন এলাকার সচেতন মহল।

নয়নাভিরাম এ জমিদার বাড়িটি তার ইতিহাস ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বড় দিঘি দুটি অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকারের পর্যটন বিভাগের সুনজর পেলে ওই জায়গাটি হতে পারে দর্শনীয় স্থান। অবহেলায় ইতিহাসের কালের সাক্ষী গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনটি হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ও সরকারি সহযোগিতায় এই মন্দিরটির সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারলে এখানে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা বেড়ে যেত।

জমিদার বাড়ির মন্দিরের সভাপতি শ্রী গৌরাঙ্গ রায় বলেন, ‘আমরা এখানে ৩টি পরিবারের প্রায় ২৪ জন সদস্য বাস করি। কিন্তু সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় জমিদার বাড়ির মন্দিরের আজ এ অবস্থা। সংস্কার হলে আরও ২০০ বছর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত মন্দির দুটি।’

সুবাস বিশ্বাস বলেন, ‘এই জমিদার বাড়ি মন্দির সংস্কারের ব্যবস্থা করা হোক। তবে তা না হওয়ায় আমরা হতাশ। এখনো আমরা পূজা অর্চনা করি। আমাদের দাবি, প্রাচীন বাড়িটির প্রতি সুদৃষ্টি দিয়ে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হোক।’

স্থানীয়দের দাবি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অযত্ন অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মন্দিরটি। তবে সরকারিভাবে এটি সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। এটি প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে গণ্য করে এর সংস্কার করা না হলে প্রাচীন ঐতিহ্যের এ নির্দশন কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।