মাথার দাম ছিল ৬ কোটি টাকা, আত্মসমর্পণ করলেন মাওবাদী নেতা ‘সোনু দাদা’
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের ধারা অব্যাহত। এবার নিহত মাওবাদী নেতা কিষেনজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি ওরফে সোনু দাদা আত্মসমর্পণ করলেন পুলিশের কাছে। তার সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেছেন আরও ৬০ জন সক্রিয় মাওবাদী। ৬৯ বছরের এই প্রৌঢ় মাও নেতা বাণিজ্যে স্নাতক এবং দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ছিলেন মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। তার মাথার দাম ছিল ৬ কোটি টাকা।
স্ত্রী-সহ আত্মসমর্পণের পর্দাপাটা
এবছরের শুরুতেই ভূপতির স্ত্রী তারাক্কা—যিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন—আত্মসমর্পণ করেন। এবার সেই পথেই হাঁটলেন ভূপতি। পুলিশের দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র এবং ছত্তিশগড় জুড়ে একাধিক মাওবাদী হামলার ‘মূল মাথা’ ছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই বহুবার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বড়সড় আক্রমণ চালানো হয়েছিল।
মাওবাদী দুনিয়ায় ‘সুর নরম’ ভূপতি
সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস ধরে সংগঠনের ভিতরে ভূপতিকে দেখা গিয়েছিল ‘মৌলিক পরিবর্তনের’ পক্ষে অবস্থান নিতে। তার বক্তব্য ছিল—“ভারতে মাওবাদী আন্দোলনের প্রভাব ক্রমশ কমছে, আর অস্ত্রের লড়াই দিয়ে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।”
পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযান ও বহু শীর্ষ নেতার মৃত্যুতে হতাশ হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে সেই পথেই ভূপতির আত্মসমর্পণ।
কিষেনজির স্ত্রীর আত্মসমর্পণের পর নতুন মোড়
গত মাসেই তেলেঙ্গানায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন কিষেনজির স্ত্রী সুজাতা। গাদওয়ালের বাসিন্দা এই প্রাক্তন মাওবাদী নেত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১০৬টি মামলা। একসময় একে–৪৭ হাতে ঘুরতেন তিনি।
১৯৮৪ সালে কিষেনজিকে বিয়ে করেন সুজাতা। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামে এক এনকাউন্টারে নিহত হন কিষেনজি। তার পর থেকেই সুজাতা দলে প্রভাবশালী মুখ হয়ে ওঠেন। এখন সেই পরিবার থেকেই দ্বিতীয় আত্মসমর্পণের ঘটনা মাওবাদী শিবিরে বড় ভাঙনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মাওবাদমুক্ত ভারত
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন—২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই মাওবাদমুক্ত ভারত গড়াই কেন্দ্রের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রে অভিযান তীব্র হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রের মতে, বর্তমানে ছত্তিশগড়–তেলেঙ্গানা সীমান্তের কারেগুট্টা পাহাড়ি অঞ্চল মাওবাদীদের অন্যতম শেষ শক্ত ঘাঁটি। ভূপতির আত্মসমর্পণ সেই ঘাঁটির ভিত কাঁপিয়ে দিতে পারে বলেই মনে করছে গোয়েন্দারা।


