Saturday, May 18, 2024
আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কায় সংখ্যালঘুরা

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যৌথ মেলবন্ধনে সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে।

১১ অক্টোবর ঢাকাস্থ নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকে শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন অভিযোগ করেন। 

১১ অক্টোবর অক্টোবর বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আলামত পাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে এরই মধ্যেই বিগ্রহ, ভাঙচুর, মন্দিরে হামলার মধ্য দিয়েই আমরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শুরু হতে দেখেছি। যেহেতু নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের হাতেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হবে, সেহেতু তাদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা অতীতে আশা করেছিলাম আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু ২০১১ সালে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো, তারপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমরা নির্বিচারে গোটা বাংলাদেশে আবারও সেসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি।

এখানে তফাতটা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রের সাথে সহিংসতার সম্পর্ক নাই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির যৌথ মিলবন্ধনে ২০১১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ঘটনাগুলো ঘটেছে।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, অতীতে এইসব হামলার মামলা নেওয়া হতো, তদন্ত হতো। কিন্তু এখন মামলা নেয় কিন্তু বিচার হয়না। সরকারি দলের সাথে যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয় না। আমরা রাজনৈতিক নেতাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। আপনারা লক্ষ্য করবেন, ওই কুমিল্লার বাহার (স্থানীয় সংসদ সদস্য) তিনি সেখানে দুর্গাপূজা সামনে রেখে বললেন, এটা নাকি মদভক্তি পূজা। এবং তিনি এটাও বলেছেন, মদ যদি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পূজা পড়ে যাবে। এর আগে মুন্সিগঞ্জের মেয়র আওয়ামী লীগ দলের প্রার্থী ছিলেন, তিনি এমপি মৃণাল দাশকে গালি দিলেন মালাউন হিসেবে। অতএব আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে কম-বেশি ক্রিয়াশীল।

তিনি বলেন, আজকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো একটা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করতো, যেটা অতীতে হয়েছে। তারপরও কিন্তু অতীতে নির্বাচন সহিংসতা হয়েছে। আজ পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে কোনো রকম সমঝোতার আলামত দেখতে পাচ্ছি না। যদি সমঝোতা হতো তাহলে আমরা তাদেরকে বলতে পারতাম, নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে আপনারা রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ভূমিকা পালন করুন। সমঝোতা না হলে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার নির্বাচনী সহিংসতা বেশি হবে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ নেতা বলেন, দলগুলো আমাদেরকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে। তারা মনে করে, এরা ভোট দিতে আসলেই বিপদ, আবার কেউ মনে করে এরা ভোট না দিয়ে যাবে কোথায়। আমরা এখানে এসেছি, কারণ আমরা ভোট দিতে যেতে চাই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ এমন শঙ্কা প্রকাশ করছি। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনে আমরা সবাই মিলে ভোট দিতে চাই। কিন্তু নির্বাচনের যেই পরিবেশ, সেই হিসেবে আমরা সহিংসতামূলক নির্বাচন চাই না। আমরা নির্বাচনী প্রচারণায় যেই সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহার করা হয়, আমরা তার অবসান চাই।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। অতীতে নির্বাচনের আগে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি কিন্তু সবসময়ই আমাদের আশ্বাসের মধ্যেই থাকতে হয়েছে। আমরা কখনও আশস্ত হতে পারি নাই। আইন আছে কেতাবে। কিন্তু আইনের প্রয়োগটা একটু কম হয়। আমরা আইনের প্রয়োগটা চাই।

বৈঠকে সিইসির সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্য চার নেতা উপস্থিত ছিলেন।