Wednesday, April 23, 2025
Latestদেশ

ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি ভারতের জন্য ‘অনেকাংশেই ভালো’, দাবি বিদেশমন্ত্রী জয়শংকরের

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার শাসনে বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করলেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের মতে, ভারতের জন্য এই পরিবর্তন ‘অনেকাংশেই ভালো’। লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে এক আলোচনায় জয়শংকর তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এবং জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি দিল্লির জন্য মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন

ট্রাম্পের শাসনে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেন ইস্যুতে তিনি কার্যত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছেন, যা পশ্চিমা বিশ্বকে বিভাজিত করছে। অন্যদিকে, বাইডেন প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে টানাপোড়েন ছিল, ট্রাম্প শাসনে তা বদলে গেছে। বাইডেন প্রশাসন যেখানে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি ‘ঘনিষ্ঠতা’ দেখিয়েছিল, সেখানে ট্রাম্পের অধীনে সেই সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে।

ভারতের জন্য কীভাবে উপকারী?

জয়শংকরের মতে, আমেরিকার নীতির এই পরিবর্তন ভারতের জন্য বেশ কিছু সুবিধা বয়ে আনছে। তিনি বলেন, “আমেরিকায় এখন এমন একজন রাষ্ট্রপতি ও প্রশাসন রয়েছে যারা বহুমেরুকরণের দিকে এগোচ্ছে। এটি ভারতের জন্য উপকারী। আমাদের কখনোই সাম্প্রতিক আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে সমস্যা হয়নি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, কিন্তু ভারত নিজের স্বাধীন নীতিতে অটল ছিল। এখন ট্রাম্পের নীতিতে সেই চাপ অনেকটাই কমেছে।

ডলারের বিকল্প খোঁজা নিয়ে জয়শংকরের ব্যাখ্যা

সম্প্রতি ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন যে, ব্রিকস (BRICS) দেশগুলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের বিকল্প খুঁজছে। তবে জয়শংকর এই দাবিকে নাকচ করে বলেন, “মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। আমরা বিশ্বে আরও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা চাই, ডলারকে প্রতিস্থাপন করা আমাদের লক্ষ্য নয়।” এর মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিল যে, তারা মার্কিন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

অভিবাসন ও শুল্কনীতি: ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান

ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল অবৈধ অভিবাসন দমন। তার শাসনে ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে, যা ভারতীয় রাজনীতিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। তবে জয়শংকর মনে করেন, ট্রাম্প যে অভিবাসন নীতিতে কঠোর হবেন, তা আগেই জানা ছিল। একইভাবে, বাণিজ্য শুল্ক নিয়েও ট্রাম্প কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যা ভারতসহ তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলছে।

ভারতের জন্য ইতিবাচক

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পররাষ্ট্রনীতি বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। যদিও এটি অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ, ভারত এটিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। জয়শংকরের মতে, ট্রাম্প যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা-ই বাস্তবায়ন করছেন, এবং এর প্রভাব ভারতের জন্য মূলত ইতিবাচক। ভারতের কূটনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখার দিক থেকে ট্রাম্পের বহুমেরুকরণ নীতি দিল্লির জন্য এক নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।