পহেলগাঁও হামলার মূলচক্রী প্রাক্তন পাক কমান্ডো হাশিম মুসা, তদন্তে উঠে এল আইএসআই যোগ
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার তদন্তে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তকারীদের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, হামলার নেতৃত্বে ছিল কট্টরপন্থী পাক জঙ্গি হাশিম মুসা। উল্লেখযোগ্যভাবে, মুসা পাকিস্তান সেনার প্রাক্তন এসএসজি প্যারা কমান্ডো, যিনি পরে লস্কর-ই-তৈয়বার সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষিতে হামলার পিছনে পাকিস্তানি সেনা এবং গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ মদত থাকার অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে।
তদন্তকারী সূত্রের খবর, শুধুমাত্র পহেলগাঁও নয়, ২০২৪ সালে গান্ডেরবালের গগনগির এবং বারামুলার বুতা পাথরি অঞ্চলে সংঘটিত দুই রক্তক্ষয়ী হামলার সঙ্গেও জড়িত ছিল হাশিম মুসা। সেই হামলায় প্রাণ হারান ছয় পরিযায়ী শ্রমিক, এক চিকিৎসক এবং সেনার চার জওয়ান। সব ক’টি হামলাই অত্যন্ত পরিকল্পিত ছিল এবং মুসাই এই হামলাগুলোর ‘ব্লুপ্রিন্ট’ তৈরি করেছিল বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
সূত্রের দাবি, মুসা কাশ্মীরে নিরাপত্তাবাহিনী এবং কাশ্মীরি নন এমন বাসিন্দাদের উপর হামলার নির্দেশ পেয়েছিল। পাকিস্তানের এসএসজি ট্রেনিং-এর ফলে কঠিন ভূপ্রকৃতি ও প্রতিকূল পরিবেশে অপারেশন চালাতে তার বিশেষ দক্ষতা ছিল। আধুনিক অস্ত্র, পারস্পরিক যোগাযোগ এবং গেরিলা কৌশলে অভ্যস্ত মুসা বহুদিন ধরেই সেনার নজরে ছিল। পহেলগাঁও হামলার আগে সোপোরে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কোনওরকমে পালিয়ে যায় সে, তবে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় দুই সহযোগী জঙ্গি আরবাজ় মীর এবং জুনেইদ ভাটের।
তদন্তে উঠে এসেছে স্থানীয় সহায়তার বিষয়টিও। পুলিশ সূত্রে খবর, হামলায় ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’ বা স্থানীয় সহায়কদের ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা। এই ব্যক্তিরাই জঙ্গিদের আশ্রয়, অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছিল। ইতিমধ্যেই এদের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেফতার করে জেরা করছে পুলিশ। সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, আরও বহু স্থানীয় যুবক জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও, পুলিশ ১৪ জন স্থানীয় জঙ্গিকে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেনার তরফে, যাতে কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গিদের প্রভাব ও প্রভাবশালীদের সহায়তা রোখা যায়।
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পিছনে পাক সংস্থাগুলির ভূমিকা এবং স্থানীয়দের জঙ্গি কার্যকলাপে ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র ও প্রতিরক্ষা মহল। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, হাশিম মুসার মতো প্রাক্তন সেনা কমান্ডোরা যখন জঙ্গি সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তখন সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তা আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি এবং স্থানীয় স্তরে নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেনা-পুলিশ যৌথভাবে বিভিন্ন সন্দেহভাজন অঞ্চলে তল্লাশি চালাচ্ছে।